মঙ্গলবার ● ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » চ্যালেঞ্জ নিয়েই তফসিল ঘোষণায় প্রস্তুত ইসি
চ্যালেঞ্জ নিয়েই তফসিল ঘোষণায় প্রস্তুত ইসি
![]()
শায়লা শবনম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও একযোগে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গণভোটের তফসিল ঘোষণা করতে পুরোপুরি প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আজ বুধবার দুপুরে সাক্ষাৎ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের ভাষণের মাধ্যমে তফসিল বিটিভি ও বেতারের সৌজন্যে জাতীয় সব গণমাধ্যমেই প্রচার করা হবে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে বর্তমান নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন কমিশন।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক ও তফসিলের রেকর্ডের প্রস্তুতি
প্রথা অনুযায়ী বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিকেলে সিইসির ভাষণ রেকর্ড করা হবে। ভাষণ রেকর্ডের সঙ্গে সঙ্গে বিটিভি ও বেতারে প্রচারের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণ হতে পারে। এই ঘোষণা দেশের আইন-শৃঙ্খলা, ভোট কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা এবং রাজনৈতিক দলের সহযোগিতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেবে।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি চূড়ান্ত। ভাষণের কপি রেডি এবং ঘোষণার পরপরই আসনভিত্তিক রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করা হবে।
প্রধান বিচারপতি ও উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করে প্রশাসনিক সহযোগিতা ও ইলেক্টরাল ইনকোয়ারি কমিটির কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কমিশন জানিয়েছে, ভোট আয়োজনে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে এবং সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। এসব সাক্ষাতে ইসির লক্ষ্য- সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা।
নতুন চ্যালেঞ্জ: একসঙ্গে গণভোট গ্রহণের সময় ৯ ঘণ্টা
এবার প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের সবচেয়ে লক্ষণীয় ঘোষণা হলো ভোটের সময়সীমা বৃদ্ধি। ভোটার চাপ বৃদ্ধি ও ভোটের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ভোটের সময় সকাল ৭:৩০ থেকে বিকেল ৪:৩০ পর্যন্ত এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯ ঘণ্টা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত গোপনকক্ষ এবং বুথ সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পোস্টাল ভোটিংও এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রথমবার একযোগে গণভোটে অংশ নেবেন। তফসিল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা ও আইনগত বন্দিদেরও পোস্টাল ভোটের জন্য নিবন্ধন করতে হবে।
দু’বার আরপিও সংশোধন
তফসিল ঘোষণার আগে দ্বিতীয় দফায় আরপিও সংশোধন করে কমিশন প্রকাশ করেছে। নতুন বিধান অনুযায়ী, পোস্টাল ব্যালটের কোনো মার্ক না থাকলে বা একাধিক প্রতীকে টিক/ক্রস থাকলে ব্যালট গণনা হবে না। এছাড়া আদালতের রায়ে প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন ঘটলে ওই আসনের জমা হওয়া পোস্টাল ব্যালটও গণনা করা হবে না। এ দফা সংশোধন আকারে ৩ ডিসেম্বর আরপিও উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হয়। এতে পোস্টাল ভোট সাধারণ ভোটের সঙ্গে একইসঙ্গে গণনা হবে এবং একাধিক সিল থাকলে ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়া একাধিক প্রতীকের মার্ক বা আদালতের রায়ের কারণে প্রার্থীর তালিকায় পরিবর্তন ঘটলে ভোট বাতিল হবে। ভোটের জন্য চূড়ান্ত চেকলিস্ট প্রস্তুত, যাতে নির্বাহী হাকিম, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মনিটরিং সেল ও আইন-শৃঙ্খলা সেল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান
এবারের নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ প্রায় ৫৫টি দল অংশ নিচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় ভোটে অংশ নিতে পারছে না। দলগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠকে সিইসি নিশ্চিত করেছেন যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি এবং এনসিপি ভোটের তফসিলের পক্ষে থাকলেও জাতীয় পার্টি অংশ নেবে কিনা তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রথমবারের মতো এত বড় নির্বাচন পরিচালনা করতে যাচ্ছে। ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি, যা বাংলাদেশে এক সময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত হবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী স্বদেশভূমিকে বলেছেন, তফসিল সম্পূর্ণ রেডি এবং কয়েক দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঘোষণা হবে। তিনি আশা করছেন, নির্বাচনি পরিবেশ অনুকূল থাকলে সকল চ্যালেঞ্জ সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
নির্বাচনি দায়িত্ব ও নিরাপত্তা
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রয়োগ করা হবে। দুই ভোট একসাথে হওয়ার কারণে বাজেট বেড়েছে, গতবার প্রায় ২,০০০ কোটি টাকার পরিবর্তে এবার প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকার ব্যয় ধরা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা পদে থেকে ভোটে অংশ নিতে পারবেন না। প্রার্থীরা পদত্যাগ করলে ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একযোগে গণভোট ও সংসদ নির্বাচন আয়োজনকে কেন্দ্র করে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। নতুন অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কর্মকর্তারা উদ্যমের সঙ্গে কাজ করছেন। ভোটাররা উৎসাহভরে ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় এবং কমিশন সেদিকে লক্ষ্য রাখছে। তফসিল ঘোষণার পর ভোট প্রক্রিয়া, পোস্টাল ভোট, দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা এবং আচরণবিধি নিশ্চিত করা হবে। রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশন সব প্রস্তুতি চেকলিস্ট সম্পন্ন করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের দুটি অতিগুরুত্বপূর্ণ ভোট আয়োজন করে প্রথম নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা নিতে যাচ্ছে এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বধীন এই কমিশন- যা তাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা। আগামী ১০ বা ১১ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করলে দেশের প্রায় ১৬ কোটি ভোটারকে ভোট দিতে প্রস্তুত হতে হবে। এবারের ভোট বাংলাদেশের নির্বাচনি ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হবে।
বিষয়: ## ইসি # চ্যালেঞ্জ # তফসিল ঘোষণা





বিচারিক ক্ষমতা পেল নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি
নির্বাচনের তফসিল চলতি সপ্তাহে : সিইসি
৫ বছর পর চশমা প্রতীকেই নিবন্ধন ফিরে পেলো জাগপা
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন পৌনে ৩ লাখে পৌঁছেছে
তফসিলের খসড়া মিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ইসির কমিশন
চলতি সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট: আজই চূড়ান্ত হতে পারে ইসির তফসিলের খসড়া
তফসিল ঘোষণার দিন-ক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি: ইসি সচিব
১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ ইসির 
