মঙ্গলবার ● ৩ জানুয়ারী ২০২৩
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট কাল
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট কাল
![]()
দায়িত্বে অবহেলা ও পক্ষপাতিত্ব করলে কঠোর ব্যবস্থা: রাশেদা সুলতানা
======
* নিরুত্তাপ ভোটের মাঠে ৫ প্রার্থী
* এবারও ভোট গ্রহণ হবে ইভিএমে
* প্রতিটি কেন্দ্র থাকবে সিসি ক্যামেরার আওতায়
* ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবে ১৮ সদস্যের স্ট্রাইকিং ফোর্স
* ভোটের আগে-পরে ৪ দিন মাঠে থাকবে আনসার ও গ্রামপুলিশ
======
শাহনাজ পারভীন এলিস
আগামীকাল বুধবার (৪ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে বহুল আলোচিত গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এই নির্বাচনে এবারও সবগুলো কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে। গত ১২ অক্টোবর এই আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটের সময় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠায় ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ভোট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের কঠোর অবস্থানকে সাধুবাদ জানায় সর্বমহল। তাই এবারও এই নির্বাচনকে ঘিরে বাড়তি সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সংবাদ সারাবেলাকে জানিয়েছেন, নির্বাচনে দায়িত্বরত কেউ অবহেলা ও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সকল পক্ষকে নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যাতে ভোটারদের মাঝে আস্থা তৈরি হয় এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলতে এবং সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান তিনি। ভোটগ্রহণে সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে এই উপনির্বাচনকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় ইসি। তাই এবারও ভোটগ্রহণের সময় কোন ধরনে অনিয়ম হলে পুনরায় কঠোর পদক্ষেপ নেবেন তারা।
![]()
ইসির যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান গতকাল ইসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্বাচনি এলাকায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কেন্দ্রভেদে মোতায়েন করা হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ থেকে ১৮ সদস্যের স্ট্রাইকিং ফোর্স। এক্ষেত্রে সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ থেকে ১৭ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবে ১৭ থেকে ১৮ জন ফোর্স। প্রতিটি কেন্দ্র থাকবে সিসি ক্যামেরার আওতায়, যার মাধ্যমে ভোটের পরিস্থিতি কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ছয়টি ভ্রাম্যমাণ ও চারটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটের মাঠে থাকবে। অন্যদিকে চার প্লাটুন বিজিবি ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নয়টি দল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। ভোটকেন্দ্র পাহারায় পুলিশ, অঙ্গীভূত আনসার ও গ্রামপুলিশ ভোটের আগে ও পরের চারদিন মোতায়েন থাকবে।
ইসির আইডিইএ প্রকল্পের ডিপিডি কমিউনিকেশন স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম সংবাদ সারাবেলাকে বলেছেন, গাইবান্ধা-৫ আসনে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের জন্য সবোর্চ্চ সর্তক অবস্থায় রয়েছি। এরই মধ্যে নির্বাচনি এলাকায় ১ হাজার ২৪২টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়া ২৯টি চর এলাকার মধ্যে সাতটি এলাকায় সরাসরি ফাইবারের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকশন দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোতে মোবাইল জিএসএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবে কমিশন। এদিকে নয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দু’জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন।
বাতিল হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় এবারের ভোট নিয়ে প্রার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস কিছুটা কম থাকলেও নির্বাচনি আমেজ ও আলোচনায় একটুও ভাটা পড়েনি। হাট-বাজার ও চায়ের দোকানগুলোতে আলোচনায় মেতে উঠছেন স্থানীয়রা। ভোট কেন্দ্রে এবার ভোটার উপস্থিত করতে পারাটা এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রার্থীদেও জন্য। তাই এ নির্বাচনকে ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ ও ‘অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই’ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী-সমর্থকরা।
ভোটের মাঠে এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন আগের পাঁচ প্রার্থীই। তবে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী (আপেল মার্কা) নাহিদুজ্জামান নিশাত উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে রয়েছেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন, জাতীয় পার্টির এএইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে সব নির্বাচনি কৌশল নিয়ে ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বড় দুই দলের নেতা-কর্মীরা। ভোটারদের দৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত মাঠের লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে লাঙ্গল ও নৌকা। তবে পিছিয়ে নেই বিকল্পধারা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীও। এ এলাকা একসময় লাঙ্গলের ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। তবে সেই চিত্র এখন পাল্টে গেছে। সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ লাঙ্গলের পক্ষে থাকলেও সচেতন নাগরিকদের ভোটের হিসাব-নিকাশ উল্টো। তারা চাইছেন এলাকার উন্নয়ন। আর সাধারণ মানুষের আবেগে রয়েছে ‘এরশাদপ্রীতি’। এসব কারণেই এই উপ-নির্বাচনে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এখন লাঙ্গল।
নির্বাচন বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, ‘উপনির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। এ প্রতীকে ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়। ভোটাররা নৌকায় ভোট দিতে ভুল করবেন না। আমি নির্বাচিত হলে গাইবান্ধার বালাসি থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত টানেল নির্মাণ ও ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থার উদ্যোগ নেবো।’
জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জু বলেন, ‘১২ অক্টোবর নির্বাচনটি বাতিল হওয়ার মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকার আবার ফিরে আসছে। বিগত নির্বাচনের মতো কোনভাবে প্রভাবিত হবে না এবং সঠিক একটা নির্বাচন উপহার দেবে। সেই বিশ্বাস নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ভোট যদি সুষ্ঠু, জালিয়াতি-কারচুপি না হয় অবশ্যই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদের লাঙ্গল প্রতীককে ভোটাররা বিজয়ী করবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
সাঘাটা ও ফুলছড়ি দু’টি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ সংসদীয় আসন। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ফুলছড়ির সাতটি ইউনিয়নে ভোটার ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ জন। আর সাঘাটার ১০টি ইউনিয়নে ভোটার ২ লাখ ২৫ হাজার ৭০ জন। ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। আর এবারই প্রথম এই উপ-নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট গ্রহণ করবে ইসি।
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের সংসদ-সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নির্বাচন কমিশন আসনটি শূন্য ঘোষণার পর ১২ অক্টোবর উপ-নির্বাচনের দিন ধার্য হয়। ভোটে অনিয়ম করায় তা বাতিল করা হয়। গত ১৪ নভেম্বর ওই অনিয়মের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। তদন্তে ১২৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার ও পাঁচ কেন্দ্রের পাঁচজন পুলিশ উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তদন্ত শেষে গত ৬ নভেম্বর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম আগামী ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতার পর থেকে গাইবান্ধার এই আসনে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে পাঁচবার জাতীয় পার্টি, চারবার আওয়ামী লীগ ও দু’বার বিএনপি জয়লাভ করে।
বিষয়: #গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট কাল





জাতীয় নির্বাচন: ইসির কাছে নিরাপত্তা চাইলেন দুই প্রার্থী
প্রার্থীদের অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি: ইসি সচিব
নির্বাচন দেখতে এবার ইইউ থেকে আসছেন প্রায় ২০০ পর্যবেক্ষক
‘ডামি’ নির্বাচনের প্রার্থীদের ভোটে আসতে দেবেন না: ইসিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
গণমাধ্যমে সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দিতে ইসির নির্দেশ
বিজয় দিবসে সাভারের স্মৃতিসৌধে সিইসি ও কমিশনারদের শ্রদ্ধা
গণভোটের ব্যালটের ‘হ্যাঁ’/‘না’ ঘরের পাশে টিক বা ক্রস চিহ্ন দিতে হবে
স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থন তালিকা দৈবচয়ন পদ্ধতিতে যাচাই করবে ইসি 
