শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২
Swadeshvumi
বুধবার ● ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » একসঙ্গে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট: প্রশাসনের কণ্ঠে বাস্তব চ্যালেঞ্জ
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » একসঙ্গে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট: প্রশাসনের কণ্ঠে বাস্তব চ্যালেঞ্জ
৫ বার পঠিত
বুধবার ● ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

একসঙ্গে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট: প্রশাসনের কণ্ঠে বাস্তব চ্যালেঞ্জ

---

শায়লা শবনম

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে একযোগে অনুষ্ঠিতব্য গণভোটকে ঘিরে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা, মব ভায়োলেন্স, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মাঠ প্রশাসনকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। এমন বাস্তবতায় মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে দিনব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন।

মব ভায়োলেন্স ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে উদ্বেগ

বৈঠকের শুরুতেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্সের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাশ হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এ ধরনের উসকানি ভবিষ্যতেও আসতে পারে। তাই কোনো পরিস্থিতিতেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ যেন নিরাপদে ভোট দিতে পারেন, ভোট শেষে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন এবং শান্তিতে বসবাস করতে পারেন— এই দায়িত্ব প্রশাসন ও পুলিশের বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সিইসি স্পষ্ট বার্তা, সহিংস ঘটনা রোধে আইনি ক্ষমতা প্রয়োগে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না। “আইনের শাসন মানে আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা। অপরাধী কে— সেটা দেখার সুযোগ নেই,” বলেন তিনি।

অপবাদ ঘোচাতে কঠোর অবস্থানে কমিশন

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ওঠা ‘ম্যানেজড ইলেকশন’ ও নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংসের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, এই অপবাদ ঘোচাতে হলে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, “আমরা প্রমাণ করতে চাই— বাংলাদেশে সঠিক ও সুন্দর নির্বাচন সম্ভব।” দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘যুগসন্ধিক্ষণ’ উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করেন, এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

মাঠ প্রশাসনের কণ্ঠে বাস্তব চ্যালেঞ্জ

বৈঠকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বাচনি নিরাপত্তা নিয়ে বাস্তব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। তারা চিহ্নিত অপরাধীদের ঢালাও জামিন বন্ধ, রাজনৈতিক তদবির রোধ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং বৈধ অস্ত্র দ্রুত জমা নিশ্চিত করার দাবি জানান। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে অস্ত্র পাচার ও অপরাধীদের চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিজিবির মোতায়েন বাড়ানোর প্রস্তাবও আসে।

বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজিরা জানান, জেলখানা থেকেই অপরাধ সংগঠিত হওয়ার প্রবণতা, অপরাধীদের জামিন পেয়ে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠা এবং রাজনৈতিক চাপ মাঠ প্রশাসনের কাজকে জটিল করে তুলছে। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে অপতথ্য ও গুজব ছড়ানোকে নির্বাচনের বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চায় পুলিশ

নির্বাচনের মাঠে দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানান পুলিশ সুপাররা। তা সম্ভব না হলে সীমিত পরিসরে পুলিশের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব দেন তারা। একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনকে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে জনবল, যানবাহন ও বাজেট সংকটের কথাও তুলে ধরা হয়।

‘সর্বশক্তি প্রয়োগের’ আশ্বাস আইজিপির

বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করে বলেন, “সর্বশক্তি দিয়ে এবং সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নির্বাচন সফল ও সুন্দর করতে পারব।” তিনি বলেন,  রাস্তা অবরোধ ও অস্থিরতা সৃষ্টির প্রবণতা বন্ধ করার সময় এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৈঠকের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি বলেন, ডিসি-এসপিদের বক্তব্য শুনে তাঁর ‘বুকের জোর’ বেড়েছে। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের নির্বাচনের ‘ভিভিআইপি’ হিসেবে উল্লেখ করে নিরপেক্ষতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। সব মিলিয়ে, এই বৈঠক থেকে নির্বাচন কমিশনের বার্তা স্পষ্ট— সহিংসতা, মব ভায়োলেন্স ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ ‘মডেল নির্বাচন’ আয়োজনই এখন ইসির প্রধান লক্ষ্য।






আর্কাইভ