শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩২
Swadeshvumi
শুক্রবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » সংলাপে ডাক পায়নি জাপা: প্রতিউত্তরে স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই ইসির
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » সংলাপে ডাক পায়নি জাপা: প্রতিউত্তরে স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই ইসির
৭ বার পঠিত
শুক্রবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সংলাপে ডাক পায়নি জাপা: প্রতিউত্তরে স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই ইসির

শায়লা শবনম

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনি সংলাপ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চার দিনে ৮ দফায় ৫৫ নিবন্ধিত দলের মধ্যে ৪৮টির সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। কিন্তু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও এবারের সংলাপে ডাকা হয়নি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টিসহ আরও ৭টি দলকে।

কেন নিবন্ধিত এসব দলকে সংলাপে ডাকা হলো না? সংলাপের শুরু থেকেই এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা বা অবস্থান না জানিয়ে কৌশলী নীরবতা বজায় রেখেছে সংস্থাটি। ফলে সংলাপে কয়টি দলকে ডাকা হলো না এবং কেন এসব প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে হলে সংলাপসহ ইসির সব কর্মকাণ্ডেই নিবন্ধিত দলগুলোর উপস্থিতি বা অংশগ্রহণ থাকা উচিত।

ইসির জনসংযোগ শাখা প্রকাশিত শিডিউলে দেখা গেছে, জাতীয় পার্টি, জাসদ, তরিকত ফেডারেশনসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শরিক কিছু দলকে সংলাপের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। ইসির একাধিক সূত্র জানিয়েছে ৫ আগস্টের পর জাপা ও বিগত সরকারের শরিক দলগুলোর অবস্থান নিয়ে সমালোচনা, ওইসব দলকে নির্বাচন থেকে বাদ রাখতে গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দলের দাবিসহ এ বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান বিতর্ক এড়াতেই নির্বাচনি সংলাপ নিয়ে এমন কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বর্তমান সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

গত ১৩, ১৬, ১৭ ও ১৯ নভেম্বর এ চার দিনে প্রতিদিন দুই পর্ব করে সংলাপ করেছে ইসি। কিন্তু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও ইসির সংলাপে ডাকা হয়নি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টিসহ ৭টি দলকে। সেগুলো হলো-

১. জাতীয় পার্টি (মূলধারা) (প্রতীক: লাঙ্গল) জি এম কাদের নেতৃত্বাধীন এরশাদপন্থী প্রধান ধারা।

২. সাম্যবাদী দল এমএল (প্রতীক: চাকা) আদর্শিক বামধারার একটি ছোট সংগঠন।

৩. বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (প্রতীক: হাতুড়ি) শ্রমিক-কৃষক রাজনীতির পুরোনো বাম দল।

৪. গণতন্ত্রী পার্টি (প্রতীক: কবুতর) শান্তি ও গণতন্ত্রের মধ্যপন্থী দল।

৫. জাতীয় পার্টি–জেপি (প্রতীক-বাইসাইকেল:)  আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন  এরশাদ-ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বহনকারী এটি জাতীয়তাবাদী-সংরক্ষণশীল দল।

৬. জাসদ (প্রতীক: মশাল) ছাত্র-গণআন্দোলনের ঐতিহ্যধারী সমাজতান্ত্রিক দল।

৭. বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (প্রতীক: ফুলের মালা) ফিবাদভিত্তিক মধ্যমপন্থী ধর্মীয় রাজনৈতিক দল। তারা শান্তি, সম্প্রীতি ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের রাজনীতিতে অবস্থান নেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ খবরের কাগজকে বলেছেন— ‘যাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত ছিল, তাদের সঙ্গে হয়েছে। এ পর্যায়ে নতুন করে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা কমিশনের কাছে প্রতীয়মান নয়।’ সংলাপ আয়োজন ইসির প্রশাসনিক-নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়া, আইনগত নয়। সংবিধানের ১১৮(৪)-এ ইসিকে নির্বাচন পরিচালনার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে—যার ভেতরে সংলাপ করা বা না করার সিদ্ধান্তও পড়ে। এছাড়া আরপিওসহ কোনো নির্বাচনি আইনে সব নিবন্ধিত দলকে সংলাপে ডাকতেই হবে— এ ধরনের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে আইনি কাঠামোও ইসিকে এ স্বাধীনতা দিয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বিশ্লেষক আব্দুল আলীম খবরের কাগজকে বলেছেন, ‘নির্বাচনি সংলাপ এখন অনেকটা ইসির জন্য রুটিন ওয়ার্ক। এটা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কখনও সব দলকে ডাকা হয়, কখনও হয় না। কাজেই সংলাপে ডাকা, না-ডাকা নতুন নয়। কিন্তু নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং লেভেল প্লেইং ফির্ড নিশ্চিত করতে হলে আমি মনে করি সংলাপসহ ইসির সব কর্মকাণ্ডেই নিবন্ধিত দলগুলোর উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ।

ইসি বলছে সংলাপ সফলভাবে শেষ হয়েছে। দলগুলোও মতামত দিয়েছে, সমালোচনাও করেছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির মতো একটি বড় দলসহ ৭টি নিবন্ধিত দলকে বাদ দেওয়ার ব্যাখ্যা এখনও অস্পষ্ট। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক চাপ, জোটগত জটিলতা ও চলমান বিতর্ক— সব মিলিয়ে কমিশন সতর্ক ও কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। তারপরও আগামী সংসদ নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার প্রশ্নে দলগুলোকে সংলাপ থেকে দল রাখায় ইসির দায় রয়েই যাচ্ছে। এদিকে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের প্রস্তুতি এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচনে সংলাপে বাদ পড়া এসব দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও ইসির সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা!






আর্কাইভ