শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩২
Swadeshvumi
বৃহস্পতিবার ● ২০ নভেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » ইসির সংলাপেও মাঠপ্রশাসনের ওপর দলগুলোর আস্থাহীনতা
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » ইসির সংলাপেও মাঠপ্রশাসনের ওপর দলগুলোর আস্থাহীনতা
৮ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২০ নভেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ইসির সংলাপেও মাঠপ্রশাসনের ওপর দলগুলোর আস্থাহীনতা

বিশেষ প্রতিবেদন

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতিশ্রুতি এবং মাঠ প্রশাসন ও আচরণবিধি বাস্তবায়নে ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে ইসিকে আরও কঠোর ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচনি সংলাপের চতুর্থ দিনে তারা এসব কথা বলেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে শংকামুক্ত করতে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন আবারও জানিয়েছেন, কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচনে অটল, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া তা সম্ভব নয়।

বুধবার দিনব্যাপী দুই দফা সংলাপে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অংশগ্রহণকারী ১২টি দলের প্রতিনিধিদের আস্থা,  অবিশ্বাস ও প্রত্যাশার কথা উঠে এঠেছে। আলোচনায় ইসির নিজস্ব জনবলকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের দাবি তুলেছে বিএনপি। আর জামায়াত চায় তফসিল ঘোষণার পর লটারির মাধ্যমে প্রশাসনের রদবদল। এনসিপি আচরণবিধি বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ভোটের প্রচারণায় ছবি ব্যবহারের বিধি কঠোরভাবে প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। গণসংহতি আন্দোলন সংসদ–গণভোটের জন্য আলাদা বুথের সুপারিশ করেছে এবং নির্বাচনি পরিবেশ রক্ষায় ‘মনিটরিং কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। দলগুলোর বিভিন্ন প্রস্তাব ও শর্ত তুলে ধরে নির্বাচন পরিবেশে আস্থা ও স্বচ্ছতার জন্য ইসিকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

সংলাপের শুরুতেই সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন দৃঢ়ভাবে জানান, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে তারা প্রতিশ্রুতিতে অটল। তিনি মনে করিয়ে দেন, আইনবিধি থাকলেও বাস্তবায়ন রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ, মাঠপর্যায়ের প্রচার এবং ভোটারকে কেন্দ্রমুখী করার ওপরই বেশি নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে ভোটার বিমুখতা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, নেতারা চাইলে ভোটার কেন্দ্রে আসেন, এবং সেই আস্থাই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।

গণভোট নিয়ে করণীয় নির্ধারণে অধ্যাদেশের অপেক্ষা

সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলেও ইসি জানিয়েছে, তারা নিজেদের করণীয় ঠিক করতে অধ্যাদেশ জারির অপেক্ষায় আছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, অধ্যাদেশ জারি হলে কমিশন গণভোটের প্রক্রিয়া, বাক্সের সংখ্যা ও ভোটগ্রহণের অন্যান্য বিষয় নিয়ে দায়িত্বশীলভাবে কাজ শুরু করবে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘সব কিছুতে যদি ঐকমত্য কমিশনের অপেক্ষায় থাকতাম, নির্বাচন আদৌ সম্ভব হত কি না জানি না।’ তার ভাষায়, ‘সবচেয়ে আগে আইনটা হতে হবে। তারপরই আমাদের দায়িত্ববোধ তৈরি হবে।’ অতীতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক বাস্তবতার ‘হিটওয়েভ’ উপেক্ষা করে নির্বাচন করা সম্ভব নয়; তাই প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাস্তববাদী ও সমন্বিত হতে হবে।

মাঠ প্রশাসন নিয়ে দলগুলোর অনাস্থা প্রকাশ

সংলাপে ইসির কাছে বিএনপি দাবি জানায়- ইসি নিজস্ব জনবল দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করুক। জামায়াত চায় তফসিলের পর একযোগে বদলি এবং গণসংহতি আন্দোলনও প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মাঠ প্রশাসন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে- এই উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বক্তব্যে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ইসির প্রতি সুপারিশ জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সকলেই হোক ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে দলটির যুক্তি, এতে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং মাঠ প্রশাসনের প্রতি ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ কমবে। আচরণবিধি নিয়ে তিনি বলেন, নিয়ম যত বাড়বে, লঙ্ঘনের প্রবণতাও তত বাড়ে তাই সিম্পল করা দরকার। এআই এর মাধ্যমে মিসইনফরমেশন নিয়েও সতর্ক করেন তিনি। এছাড়া ইসিকে ‘নতজানু’ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন সংবিধান কমিশনকে শক্ত অবস্থানেই দেখতে চায় জাতি।

লটারির মাধ্যমে ডিসি-এসপি বদলির দাবি জানিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। জামায়াতের অভিযোগ, সাম্প্রতিক ডিসিএসপি বদলিতে ‘কোনো ডিজাইন’ বা ‘উদ্দেশ্য’ কাজ করছে। তাদের দাবি তফসিল ঘোষণার পর একদিনেই সব ডিসিএসপি বদলি করতে হবে; প্রয়োজনে লটারির মাধ্যমে। গণভোট প্রসঙ্গে দলটি এখনো মনে করে, সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হলে ভোটাররা ‘জুলাই সনদ’ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতো। ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন, প্রবাসী ভোটাররা পাসপোর্ট ব্যবহার করে নিবন্ধনের সুযোগ এবং নকল ব্যালট রোধে কঠোর নজরদারির দাবি জানায় দলটি। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সরিষার মধ্যে ভূত আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে।’ অর্থাৎ মাঠ প্রশাসন ও ইসির কার্যকরীতার ওপর অবিশ্বাস কাটেনি এখনো।

নির্বাচনি আচরণবিধি বাস্তবায়নে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির নেতারা। প্রতি দলের জন্য ইসির নির্দিষ্ট যোগাযোগ কর্মকর্তা রাখার সুপারিশ তাদের। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জোট করলেও নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে-ইসির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কোনো বড় দলের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। ইসি যেন নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকেন সে আহ্বান জানাই।’ দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, ‘এ আচরণবিধি প্রয়োগে ইসির সক্ষমতা নেই। শক্তিশালী কারোর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না।’ তার দাবি পোস্টার নিষেধাজ্ঞা ‘অবাস্তব’, বিধান অস্পষ্ট, আর অভিযোগ নিষ্পত্তির মেয়াদ নির্ধারণ নেই। এনসিপির মতে- বিএনপি যদি তারেক রহমান বা জিয়াউর রহমানের ছবি প্রচারে ব্যবহার করে, ইসি কী তা বন্ধ করতে পারবেন? সেটাই হবে ইসির প্রথম পরীক্ষা। দলটির আরেক নেতা তাসনিম জারা প্রস্তাব করেন এআই অপব্যবহার ঠেকাতে মেটা ও টিকটকের সঙ্গে ইসির সমন্বয় দরকার।

সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের জন্য আলাদা বুথ, মনিটরিং কমিটি ও পোস্টার ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা। দলটির প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকির মতে ‘অংশীজনের মতামত ছাড়াই বিধান চূড়ান্ত এটা সঠিক হয়নি।” তিনি আরও বলেন, সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের ব্যালট একই বুথে গণনা করলে বিভ্রান্তি তৈরি হবে তাই আলাদা বুথ প্রয়োজন। তিনি প্রস্তাব করেন নির্বাচনি পরিবেশ পর্যবেক্ষণ কমিটি, পোস্টার বিলবোর্ড বিষয়ে পুনর্বিবেচনা, নির্বাচন-পূর্ব অস্ত্র উদ্ধার ও নিরাপত্তা জোরদার, ভোটার তালিকা ও প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা দরকার।

 

---

ইসির সংলাপে লেবার পার্টি প্রশ্ন তোলে এনসিপিকে ‘শাপলা প্রতীক’ দেওয়া ইসির আত্মসমর্পণ। এনডিএম মনে কওে তফসিলের পর ইসিই মূল কর্তৃত্ব। বিএমজেপির নেতাদের দাবি ভোটের আগে ৭ দিন ও পরে ১০ দিন কঠোর নিরাপত্তা। ইনসানিয়াত বিপ্লবের নেতারা প্রস্তাব করে মোবাইল ‘ডিজিটাল থাম্ব’ পদ্ধতি চালু করার। সব দলের বক্তব্যেই নিরাপত্তা, মাঠ প্রশাসন, আচরণবিধি ও ইসির নিরপেক্ষতা ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কয়েকটি বাস্তবতা স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে আচরণবিধি আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন কঠিন। নতুন বিধি অনেক কঠোর পোস্টার নিষিদ্ধ, মাইকিং সীমিত, ছবি ব্যবহারে কঠোরতা। কিন্তু দলগুলো সন্দেহ করে ইসি কি আদৌ সব দলের বিরুদ্ধে সমানভাবে এই বিধিগুলো প্রয়োগ করতে পারবে? গণভোট ইস্যুতে অস্পষ্টতা এখনো কাটেনি। আইনঅধ্যাদেশ ছাড়া ইসি কোনো পরিকল্পনা শুরু করতে পারছে না। কিন্তু দলগুলো চাইছে তাৎক্ষণিক দিকনির্দেশনা।

গতকাল পর্যন্ত চার দিনের সংলাপে ৪৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে নির্বাচন কমিশন। সংলাপে সমাপনী বক্তব্যে কমিশন প্রধান সিইসি বলেছেন ভোটাররা আর তেমন কেন্দ্রে যান না। কাজেই পরিস্থিতির উত্তরণে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সিইসির মতে- নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে এই কর্মযজ্ঞ সফল করা সম্ভব নয়। দলগুলোর সহযোগিতা, ভোটারের অংশগ্রহণ এবং মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা তিনটির সমন্বয়েই আসন্ন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে চায় নির্বাচন কমিশন।






আর্কাইভ