শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২
Swadeshvumi
বুধবার ● ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » এনসিপিতে গৃহদাহ: পদত্যাগের হিরিক
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » এনসিপিতে গৃহদাহ: পদত্যাগের হিরিক
২১ বার পঠিত
বুধবার ● ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

এনসিপিতে গৃহদাহ: পদত্যাগের হিরিক

---

শায়লা শবনম

দলীয় শৃঙ্খলা, গণতান্ত্রিক চর্চা ও নেতৃত্বের স্বচ্ছতা এই তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সংকটে বিপর্যস্ত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)। কিন্তু মাত্র ১০ মাসের মাথায় দলটির ভেতরে চলছে গৃহদাহ, বেজে উঠেছে ভাঙনের সুর। এসব ঘটনা এখন আর গোপন নয়; প্রকাশ্য পদত্যাগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ এবং সাংগঠনিক অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে সেই সংকট ক্রমেই গভীর হচ্ছে।

গত এক মাসে সারাদেশে দলটির প্রায় ৪০ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন বলে একাধিক দলীয় ও স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। পদত্যাগকারীদের মধ্যে জেলা, উপজেলা এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারাও রয়েছেন।

কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বস্তরে ভাঙন

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগে অন্তত ১২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ জন, রাজশাহী ও রংপুর মিলিয়ে ১০ জন এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ৭ জনের মতো নেতাকর্মী গত কয়েক সপ্তাহে দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পদত্যাগপত্র সরাসরি কেন্দ্রীয় দপ্তরে না পাঠিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, যা দলটির ভেতরে যোগাযোগ ও আস্থার ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।

পদত্যাগ করা নেতাদের অভিযোগ

একাধিক পদত্যাগপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অভিযোগগুলো প্রায় একই ধরনের— কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া, তৃণমূল মতামত উপেক্ষা, সাংগঠনিক কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি ও অযোগ্যদের অগ্রাধিকার, আর্থিক স্বচ্ছতার অভাব এবং ভিন্নমত দমন ও প্রশ্ন তুললেই ‘বিরোধী’ তকমা।

দলটির একজন সাবেক জেলা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বদেশভূমিকে বলেছেন, “এনসিপি আদর্শের কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে দলটি এখন কয়েকজনের নিয়ন্ত্রণে। প্রশ্ন করলেই অপমান, দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া এই সংস্কৃতিতে আর থাকা সম্ভব হয়নি।”

নেতৃত্ব সংকট ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব

দলীয় সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কমিটির ভেতরেও দীর্ঘদিন ধরে মতানৈক্য চলছে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মিত বৈঠক না হওয়া, কেন্দ্রীয় কাউন্সিল কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকা এবং দায়িত্ব বণ্টনে অস্পষ্টতা— এসব বিষয় দলকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে ফেলেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, যা পদত্যাগের ঢেউ আরও বাড়িয়ে দেয়।

পদত্যাগ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যাখ্যা

এ বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা পদত্যাগের ঘটনা স্বীকার করলেও সংখ্যার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাদের দাবি, “দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় কিছু অসন্তুষ্ট ব্যক্তি সরে গেছেন। এটিকে সংকট বলা ঠিক নয়।” তবে প্রশ্ন উঠছে— যদি এটি কেবল ‘পুনর্গঠনজনিত অসন্তোষ’ হয়, তাহলে কেন বারবার দায়িত্বশীল নেতারাই দল ছাড়ছেন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন

নতুন বা বিকল্পধারার রাজনীতির দাবিতে গঠিত দলগুলোর ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ— বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেই জায়গায় ব্যর্থ হলে দল দ্রুত ভাঙনের মুখে পড়ে।

বিশ্লেষক অধ্যাপক (অব.) এম. এ. রহমান বলেন, “এনসিপির সংকট কাঠামোগত। নেতৃত্ব যদি আত্মসমালোচনায় না যায় এবং তৃণমূলকে গুরুত্ব না দেয়, তাহলে দলটির ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।”

দলটির ভবিষ্যৎ কোন পথে?

পদত্যাগের এই ধারা অব্যাহত থাকলে এনসিপির সাংগঠনিক শক্তি ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন দেখার বিষয়— দলীয় নেতৃত্ব সংকটকে অস্বীকারের পথ বেছে নেয়, নাকি গঠনমূলক সংস্কারের মাধ্যমে আস্থার জায়গায় ফেরার চেষ্টা করে।

সার্বিক প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় স্পষ্ট— এনসিপির বর্তমান গৃহদাহ শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, বরং এটি দেশের রাজনীতিতে দলটির অবস্থান নিয়েই বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।






আর্কাইভ