শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
Swadeshvumi
সোমবার ● ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » জাতীয় » সিইসির বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
প্রচ্ছদ » জাতীয় » সিইসির বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
৩ বার পঠিত
সোমবার ● ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সিইসির বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

বিশেষ প্রতিবেদক

---

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলে মন্তব্য করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিরা এ বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন, অসংবেদনশীল ও নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সিইসির বক্তব্য প্রত্যাহার, ব্যাখ্যা এমনকি ক্ষমা চাওয়ার দাবিও উঠেছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সিইসির বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, এই বক্তব্য জাতির অনুভূতিতে আঘাত করেছে এবং এর ব্যাখ্যা সিইসিকেই দিতে হবে।

আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন,

“ওসমান হাদির ওপর এই বেদনাদায়ক কাপুরুষোচিত হামলায় গোটা দেশ যখন ব্যথিত, তখন রাষ্ট্রের সবচেয়ে দায়িত্বশীল একটি জায়গায় বসে থাকা ব্যক্তি এমন বক্তব্য দিয়েছেন, যা জাতিকে আহত করেছে।”

শফিকুর রহমান বলেন, সিইসির দায়িত্ব শুধু নির্বাচন আয়োজন নয়, বরং জাতির আস্থার প্রতীক হওয়া।

“আপনাকে প্রমাণ করতে হবে—আপনি এই স্পর্শকাতর দায়িত্ব পালনের জন্য উপযুক্ত। দেরি না করে জাতির সামনে আপনার বক্তব্য স্পষ্ট করুন।”

তিনি আরও বলেন, হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যেই গুলি করা হয়েছে এবং তাঁর জীবন নিয়ে জামায়াত গভীরভাবে শঙ্কিত। চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর উদ্যোগে অন্তর্র্বতী সরকারকে সাধুবাদ জানালেও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

এদিকে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন,  “শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যে নির্বাচন কমিশন এটিকে বিচ্ছিন্ন বলে, সেই কমিশনের প্রধানের দায়িত্বে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার থাকে না।”

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

“আমরা নির্বাচন চাই, কিন্তু সেটা চাই একটি নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে।”

নাহিদ ইসলাম একই সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার কথা তুলে ধরে বলেন, তরুণ ও বিপ্লবীদের টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে, যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।

অন্যদিকে, এদিন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্র জনতার প্রতিনিধি সাদিক কায়েম এ বিষয়ে সাংবাদিকদেও বলেন,  “পুরো ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে আমরা এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি। একজন আহত বিপ্লবীকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি বলেন, “আমরা অনুরোধ করবো—প্রধান নির্বাচন কমিশনার দ্রুত তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করুন এবং দায়িত্বশীল আচরণ করে জাতির কাছে ক্ষমা চান।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একজন সিইসির বক্তব্য কেবল ব্যক্তিগত মত নয়—তা রাষ্ট্রের অবস্থানকেই প্রতিফলিত করে। হাদির ওপর হামলার মতো গুরুতর ঘটনার ক্ষেত্রে ‘বিচ্ছিন্ন’ শব্দের ব্যবহার নির্বাচন কমিশনের সংবেদনশীলতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বিশেষ করে নির্বাচনপূর্ব সময়ে নিরাপত্তা, রাজনৈতিক সহিংসতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ নিয়ে জনমনে যে উদ্বেগ রয়েছে, সিইসির বক্তব্য সেই উদ্বেগ প্রশমনের বদলে আরও গভীর করেছে বলে মনে করছেন অনেকে।

প্রসঙ্গত, আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে একটি অনুষ্ঠানে সিইসি হাদিও বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, “আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলো কোথায়? মাঝেমধ্যে দু-একটা খুনখারাবি হয়। এই যে হাদির একটা ঘটনা হয়েছে, আমরা এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি। নির্বাচন এলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকে।”

এই বক্তব্য প্রকাশের পরপরই রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম নেয়। বিশেষ করে একজন রাজনৈতিক কর্মী ও সম্ভাব্য প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলা নির্বাচনী পরিবেশ ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক—এমন অভিযোগ তুলেছেন বিভিন্ন পক্ষ।






আর্কাইভ