শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ন ১৪৩২
Swadeshvumi
বৃহস্পতিবার ● ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » একসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের কাউন্টডাউন শুরু আজ
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » একসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের কাউন্টডাউন শুরু আজ
৭ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

একসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের কাউন্টডাউন শুরু আজ

---শায়লা শবনম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দেশের প্রথম গণভোট দুটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক আয়োজনে দেশের আনুষ্ঠানিক কাউন্টডাউন শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তার এই ভাষণটি বিটিভি, বেতারসহ সব গণমাধ্যমেই প্রচার করা হবে। গতকাল বুধবার বিকেলে সিইসির তফসিল-সংক্রান্ত ভাষণটি রেকর্ড করা হয়। নির্বাচন প্রস্তুতির প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে তফসিল ঘোষণার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

রাজনীতি এখন ভোটকেন্দ্রিক গতি পাচ্ছে; দলগুলো মনোনয়ন, জোটবিন্যাস, মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আজকের তফসিল ঘোষণার পরই শুরু হবে নির্বাচনি সূচির আনুষ্ঠানিক দৌড়—প্রার্থিতা, মনোনয়ন, প্রচারণা এবং প্রথমবারের মতো গণভোটের প্রস্তুতি। দেশবাসীর দৃষ্টি এখন স্থির তফসিল ঘোষণার দিকে। দেশের রাজনীতিও নির্বাচনমুখী, নির্বাচন প্রস্তুতি ও প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো। সিইসির তফসিল-সংক্রান্ত এই ভাষণটি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচারের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া।

গতকাল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পর নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব আখতার আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, একসঙ্গে দুই আয়োজনে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্থাটি। অর্থবহ ভোট আয়োজনে ইসিকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

 

তফসিলের ভাষণ প্রস্তুত, আজ সন্ধ্যায় প্রচার

বুধবার বিকেল ৪টায় বিটিভি ও বেতারের বিশেষ টিম নির্বাচন ভবনে গিয়ে রেকর্ড করে সিইসির ভাষণ। ভাষণে তুলে ধরা হয়েছে ৩০০ আসনে ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি, গণভোটের কাঠামো, ব্যালট পেপারের ধরন, ভোটের সময় বাড়ানোর যৌক্তিকতা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার সার্বিক দিক।

সাধারণত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের দিনই সিইসির ভাষণ রেকর্ড ও প্রচার হয়ে থাকে। কিন্তু প্রথমবারের মতো একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার কারণে এবার রেওয়াজে পরিবর্তন এসেছে। ভাষণ রেকর্ডের পর কমিশন বৈঠকে বসে প্রচারের সময় চূড়ান্ত করা হয়। ভাষণের প্রতিটি অংশ আলাদাভাবে যাচাই করা হয়েছে যাতে দুটি আয়োজনের ব্যাখ্যায় কোনো অসামঞ্জস্য না থাকে।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে দল, প্রার্থী, ভোটারদের মধ্যে ভোটের আবহ শুরু হবে। নির্বাচন কমিশনের ‘কর্তৃত্ব’ বাড়বে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে আচরণবিধি প্রতিপালনে তৎপর হবে ইসি। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারণার সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা। তফসিলে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমার শেষ দিন, বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ দিন ও ভোটের দিন থাকবে সংসদ নির্বাচনের জন্য। আর গণভোটের জন্য শুধু ভোটের দিন উল্লেখ থাকবে।

ইসির প্রস্তুতিতে রাষ্ট্রপতির সন্তোষ, সহায়তার আশ্বাস

তফসিলের আগের দিন বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নাসির কমিশন। সিইসির নেতৃত্বে চার কমিশনার ও ইসি সচিব বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে রাষ্ট্রপতি জানতে চান— ভোটার তালিকার হালনাগাদ অবস্থা, গণভোটের পদ্ধতি, ব্যালটের নকশা ও রং, ভোটগ্রহণে সম্ভাব্য সময়, দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষকদের প্রস্তুতি ও পোস্টাল ব্যালটের নতুন বিধান।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, রাষ্ট্রপতি বিশেষভাবে আগ্রহ দেখিয়েছেন দেশের বাইরে থাকা ভোটারদের ভোটাধিকার ও ইন-কান্ট্রি পোস্টাল ভোটিং–এর কারিগরি দিক নিয়ে। এসব বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন—“অর্থবহ ভোট আয়োজনে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেওয়া হবে।”

প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিতে ইসির উদ্যোগ

তফসিল ঘোষণার আগে প্রশাসনিক কাঠামোর দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্তরে আলাদাভাবে বৈঠক করেছে ইসি— বিচার বিভাগ ও অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়। গত মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন সিইসি ও কমিশনাররা। দুইটি আসনের সীমানা–সংক্রান্ত মামলা, ইলেক্টরাল ইনকোয়ারি কমিটির ভূমিকা এবং নির্বাচনি অপরাধে বিচার বিভাগীয় সমন্বয়— এসব বিষয় উঠে আসে আলোচনায়। প্রধান বিচারপতি ইসিকে আশ্বস্ত করেন, নির্বাচনি সংক্রান্ত যে কোনো বিচারিক জটিলতা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে রেওয়াজের বাইরে গিয়ে এবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছে নাসির কমিশন। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সব সংস্থার সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে সিইসি জানান—ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনে ইসি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার পথ—সরকার ইসিকে সব সহায়তা দেবে।’

 

ভোটকেন্দ্রের প্রস্তুতি ও ভোট দেবেন যারা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন প্রায় ১৩ কোটি নাগরিক। সবশেষ হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন, মহিলা ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩৪ জন। ভোটারদের জন্য ৪২ হাজার ৭৬১টি কেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে, যেখানে মোট ভোটকক্ষ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটকক্ষ ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি এবং মহিলা ভোটকক্ষ ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি।

একসঙ্গে দুই ভোটে ইসির চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের নির্বাচনি ইতিহাসে এই প্রথম একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট। এর ফলে ভোটকেন্দ্র, ব্যালট পেপার, বুথ ব্যবস্থাপনা, ভোটার নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুতে প্রয়োজন দ্বিগুণ প্রস্তুতি। প্রথমবারের মতো প্রবাসী ভোটার, দেশের ভেতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এবং কয়েদিরা আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। এছাড়া কোনো দল জোট গঠন করলেও এবার নিজেদের প্রতীকের বাইরে অন্য দলের প্রতীকে ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগ রাখেনি নির্বাচন কমিশন।

দুটি ব্যালট দেওয়ার কারণে ভোটগ্রহণের সময় এবার এক ঘন্টা বাড়িয়েছে ইসি। কারণ মক ভোটিং–এ দেখা গেছে, একজন ভোটারকে দুটি ব্যালট দিলে অতিরিক্ত ৩০–৫০ সেকেন্ড বেশি লাগে। এজন্য ভোটের সময়সীমা ৮ ঘণ্টা থেকে ৯ ঘণ্টা করা হয়েছে— ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৭:৩০ থেকে বিকেল ৪:৩০ পর্যন্ত।

এছাড়া একসঙ্গে দুই ভোটের জন্য এবার বাড়ানো হচ্ছে বুথ এবং গোপন কক্ষ। তবে কেন্দ্রর সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। ভোটের দিন নারী–পুরুষ ভোটারের জন্য থাকবে আলাদা প্রবেশপথ। গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট বক্স আলাদা রঙে। ইসির লক্ষ্য— ভোটারের চাপ কমানো এবং কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা এড়ানো।

তফসিল ঘোষণার পর ১৫ দিনের মধ্যে পোস্টাল ব্যালটের জন্য সরকারি চাকরিজীবী, আইনগত হেফাজতে থাকা ব্যক্তি, নির্বাচনি ডিউটিতে থাকা বাহিনীর সদস্যদের নিবন্ধন করতে হবে। আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকা পৃথকভাবে যাচাই করছে ইসি। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— নির্বাচনের মাঠে কোনো পক্ষপাত বা ভয়–ভীতি বরদাশত করা হবে না। এবার পর্যবেক্ষণে মাঠে নামবে ৮১টি দেশীয় সংগঠন, যা এবারকার নির্বাচনের স্বচ্ছতা যাচাইয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রশ্নে বিতর্ক

সম্প্রতি ইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী অভিযোগ করেছে, সভা–সমাবেশে হামলা, নারীর ওপর আক্রমণ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের গতি— এসব কারণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইসি বলেছে, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সমতাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা ছাড়া একসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের মতো বড় আয়োজন কাঙ্ক্ষিত গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

---

নির্বাচন পরিচালনা, পোস্টাল ভোটের নতুন বিধান, দুই প্রকার ব্যালট পেপার, সময় বৃদ্ধি, পর্যবেক্ষক বাহিনী—সব মিলিয়ে নাসির কমিশনের সামনে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব। আজ সন্ধ্যায় সিইসির ভাষণ প্রচারের মধ্য দিয়েই শুরু হবে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক আয়োজনের আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত। শুরু হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দেশের প্রথম গণভোটের কাউন্টডাউন।






আর্কাইভ