বৃহস্পতিবার ● ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » প্রধান সংবাদ » সাম্প্রদায়িকতার পুনরুত্থান, নির্বাচন-পূর্ব বাংলাদেশের বাস্তবতা
সাম্প্রদায়িকতার পুনরুত্থান, নির্বাচন-পূর্ব বাংলাদেশের বাস্তবতা
মো: নূর-ই সাইফুল্লাহ
বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পঞ্চান্ন বছর পরে দাঁড়িয়ে আমরা একটি কঠিন সত্য মেনে নিতে বাধ্য। রাষ্ট্র হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনো জাতি হিসেবে গড়ে ওঠা সম্পূর্ণ হয়নি। নাগরিক পরিচয়, দায়িত্ববোধ ও সামাজিক দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে আমাদের মধ্যে পর্যাপ্ত চর্চা নেই। এর ফলেই ক্ষুদ্র ঘটনা বড় হয়ে ওঠে, সামাজিক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে, আর অতি রাজনীতি ও অপরাজনীতি সমাজজীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের সমাজে ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগত বিভাজন কখনো কখনো স্বাভাবিক জীবনের ওপর ছায়া ফেলে। অথচ বাস্তবতা হলো হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কিংবা আদিবাসী সবাই একই ভূখণ্ডের নাগরিক, একই সমাজের অংশ। এই মৌলিক সত্য উপলব্ধি যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখনই পরস্পরের প্রতি সন্দেহ, অবিশ্বাস ও দোষারোপ বাড়তে থাকে। এতে শান্তি-সম্প্রীতির ভিত্তি দুর্বল হয় এবং সামাজিক সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রাজনৈতিক উত্তাপ ও নির্বাচন-পূর্ব বাস্তবতা
সামনের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক তাপমাত্রা ইতোমধ্যে বেড়ে উঠেছে। দলীয় প্রতিযোগিতা, পারস্পরিক অবিশ্বাস, বিভিন্ন দাবিদাওয়া এবং রাজনৈতিক বক্তব্যের বিভাজনমূলক প্রবণতা সামাজিক আবহকে আরও চাপযুক্ত করে তুলছে। নির্বাচন গণতন্ত্রের উৎসব, কিন্তু রাজনৈতিক উত্তাপ যখন অতিরিক্ত মাত্রায় পৌঁছে যায়, তখন সেটিই সমাজে বিভক্তি, উত্তেজনা ও সাম্প্রদায়িক উস্কানির সুযোগ সৃষ্টি করে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো এমন জায়গায় পৌঁছায়নি যেখানে নির্বাচনকে মতভেদের স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হিসেবে দেখা হয়। বরং কেউ কেউ ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক আবেগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে সমাজের শিকড়ের ভেতরে চাপা থাকা বিভাজন কখনো কখনো হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়ে ওঠে যা কোনোভাবেই একটি সচেতন ও পরিণত জাতির লক্ষণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সামাজিক মনস্তত্ত্ব
এতে যোগ হয়েছে বর্তমান অর্থনৈতিক চাপ। বৈশ্বিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা মানুষকে মানসিকভাবে আরও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। অর্থনৈতিক সংকট সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশার জন্ম দেয়, যার ফলে সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে কোনো সাম্প্রদায়িক বা ভয় সৃষ্টিকারী গুজব খুব সহজেই মানুষের আবেগকে উত্তপ্ত করতে পারে।
অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার যুগ্ম চাপ সমাজকে বেশি ভঙ্গুর করে তোলে। তাই এই সময়ে সমাজ সচেতনতার ঘাটতি পূরণ, পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি এবং নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা আরও বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে।
সমাধানের পথে: মানবতা ও নাগরিকত্বের পুনর্জাগরণ
পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন সবচেয়ে জরুরি সমাজ সচেতনতার পুনর্গঠন। শিক্ষা, পরিবার, স্থানীয় নেতৃত্ব এবং নাগরিক উদ্যোগ সব জায়গায় মানবতা, পারস্পরিক সম্মান ও সহাবস্থানের মূল্যবোধকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে হবে। সমাজে শান্তি টিকিয়ে রাখা কোনো প্রকল্পভিত্তিক উদ্যোগ নয়; এটি প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক অঙ্গীকার।
আমাদের স্বীকার করতেই হবে সাম্প্রদায়িকতার শিকড় এখনো সমাজে রয়ে গেছে; কখনো প্রকাশ্যে, কখনো প্রচ্ছন্নভাবে। রাজনৈতিক বক্তব্যের অপরিণততা, পরস্পরের প্রতি সহনশীলতার ঘাটতি এবং দলীয়করণের চাপে এই প্রবণতা আরও উসকে ওঠে। অথচ ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের মানবিক, অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। সেই চেতনাকে রাষ্ট্র ও সমাজে শক্ত ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া সাম্প্রদায়িকতার পুনরুত্থান ঠেকানো সম্ভব নয়।
তাই সমাধানের পথও স্পষ্ট মানবতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে সবাইকে পুনরায় একত্র করা। নাগরিককে তার এলাকার প্রতি দায়িত্বশীল হতে শেখাতে হবে। পাড়া-মহল্লায় সুশাসন, শান্তি-সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখার উদ্যোগ স্থানীয় মানুষকেই নিতে হবে। প্রশাসনিক শক্তি বা প্রকল্পের মাধ্যমে সাময়িক স্থিতি আনা যায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি শান্তির ভিত্তি আসে মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন থেকে।
শেষ কথা
আজকের বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মানুষকে বোঝানো যে আমরা একে অপরের প্রতিযোগী নই; আমরা একই সমাজের সদস্য, একই ভবিষ্যতের অংশীদার। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা ধর্মীয় যেকোনো বিভাজন অতিক্রম করতে হবে আমাদের নাগরিকত্বের বোধ দিয়ে, মানবতার চেতনাকে সামনে রেখে। যখন আমরা এই উপলব্ধিতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারব, তখনই শান্তি-সম্প্রীতি টেকসই হবে, আর বাংলাদেশ সামনে এগোবে একটি আধুনিক, আত্মবিশ্বাসী ও মানবিক জাতি হিসেবে।
![]()





মেট্রোরেলের ভ্যাট প্রত্যাহার
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি
কাল থেকে মাঠে নামছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
ভর্তিতে স্কুল পায়নি সাড়ে ৭ লাখ শিক্ষার্থী
তফসিল ঘোষণার পর রাস্তায় নামলেই কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু
মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী ৬ দিন, স্বামী ৩ দিনের রিমান্ডে
মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী ৬ দিন, স্বামী ৩ দিনের রিমান্ডে
জাতীয় স্মৃতিসৌধে ২দিন সর্বসাধারণের প্রবেশ বন্ধ 
