শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩২
Swadeshvumi
শনিবার ● ১৫ নভেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » অপরাধ » ড্রামে খণ্ডিত লাশ: হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে ভিন্ন তথ্য র‌্যাব ও পুলিশের
প্রচ্ছদ » অপরাধ » ড্রামে খণ্ডিত লাশ: হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে ভিন্ন তথ্য র‌্যাব ও পুলিশের
৮ বার পঠিত
শনিবার ● ১৫ নভেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ড্রামে খণ্ডিত লাশ: হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে ভিন্ন তথ্য র‌্যাব ও পুলিশের

নিজস্ব প্রতিবেদক

---

রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হক কে হত্যা এবং লাশ খণ্ডিত করে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের পাশে দুটি ড্রামে ফেলে রাখার মামলায় প্রধান আসামি জরেজুল ইসলামের (৩৯) প্রেমিকা শামীমাকে আলামতসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। অন্যদিকে প্রধান আসামিক জরেজকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে ভিন্ন তথ্য দিয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ।

র‌্যাবের দাবি, অন্তরঙ্গ কার্যকলাপের ভিডিও ধারণ করে আশরাফুলের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে তাকে হত্যা করা হয়। আর পুলিশ বলছে, ত্রিভুজ প্রেমের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানিয়েছে, শামীমা আক্তারের দেয়া তথ্যমতে ও তার মোবাইল ফোন বিশ্লেষণে জানা যায় হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি জরেজের সঙ্গে তার এক বছরের অধিক সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজ শামীমাকে জানায় তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে। এর থেকে জরেজ ৭ লাখ টাকা আর শামীমা ৩ লাখ টাকা নেবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা ভিকটিম আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে একমাস থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করে তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। মোবাইল ফোনে তাদের নিয়মিত অডিও এবং ভিডিও কলে কথা চলতে থাকে। পরবর্তীতে গত ১১ নভেম্বর রাত ৮ টায় জরেজ ভিকটিম আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হন। ঢাকায় আসার পর গত ১২ নভেম্বর জরেজ ও আশরাফুল শামীমার সঙ্গে দেখা করে ঢাকা মহানগরীর শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাসা ভাড়া করে তিনজন একত্রে বাসায় ওঠেন। রংপুর হতে ঢাকায় আসার আগে জরেজ তার প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে ফোনে জানান ভিকটিম আশরাফুলের সঙ্গে সে যেন অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই ভিডিও দেখিয়ে যাতে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যায়।

র‌্যাব আরো জানিয়েছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হালকা অচেতন করে যাতে বাইরে হতে জরেজ অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করলে আশরাফুল তা বুঝতে পারেন না। পরবর্তীতে যখন একান্ত সময় কাটান তখন জরেজ বাইরে থেকে ভিডিও ধারণ করেন। উক্ত ভিডিও শামীমার মোবাইল দিয়ে ধারণ করা হয় যা বর্তমানে উদ্ধারকৃত মোবাইলে রয়েছে। শামীমার দেয়া তথ্য মতে ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ আশরাফুলের হাত দড়ি দিয়ে বেধে ফেলে এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকে দেয়। জরেজ অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে উত্তেজিত হয়ে অচেতন থাকা ভিকটিম আশরাফকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। অতিরিক্ত আঘাত এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকানো থাকায় শ্বাস না নিতে পেরে ঘটনাস্থলেই আশরাফুল মৃত্যুবরণ করেন।

অন্যদিকে, একই ঘটনায় জরেজকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, জরেজুল ইসলাম একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী। অনুমানিক দেড় মাস আগে তিনি দেশে আসেন। বিদেশে থাকাকালীন জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ‘বিগো লাইভ’ অ্যাপের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার শামীমা ইসলাম নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। জরেজুল ইসলাম দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী বিষয়টি জানতে পারলে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। জরেজুলের স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে স্বামীর বন্ধু আশরাফুলকে শামীমার মোবাইল নম্বর দেন এবং জরেজুলকে এসব থেকে নির্বৃত্ত করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু আশরাফুল নিজেই এক পর্যায়ে শামীমার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

তিনি জানান, নিহত আশরাফুল তার বন্ধুকে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জাপান পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন, তার মধ্যে শামীমার ৭ লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিলো। মূলত এই টাকার সংস্থান এবং শামীমার সঙ্গে একান্তে দেখা করার আশায় দুই বন্ধু একত্রে রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তিনজন একত্রে দেখা করার জন্য একটি নিরাপদ স্থান খোঁজ করছিলেন। পরে তিনজনের পরিকল্পনায় তারা ডেমরা থানাধীন ব্যাংক কলোনি এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। একইদিন দুপুরে বাসায় ওঠে তিনজন মিলে সেই বাসা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন। স্থানীয় বাজার থেকে তারা একটি তোশক, তিনটি বালিশ ও জানালার পর্দা কেনেন। পরস্পর সম্মতিতে তারা একে অপরের সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করেন। কিন্তু আশরাফুল শামীমার সঙ্গে অস্বাভাবিক যৌনকর্ম করতে চাইলে শামীমা তাতে বাধা দেন। এতে করে দুজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয় এবং শামীমা কান্নাকাটি শুরু করলে জরেজুল বিষয়টি নিয়ে বন্ধুর ওপর হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে যান। আশরাফুল জোরাজুরি করার এক পর্যায়ে শামীমা কৌশলে আশরাফুরের হাত বেঁধে অস্বাভাবিক যৌনকর্ম করতে প্রলুব্ধ করেন। আশরাফুল এসময় শারীরিক সম্পর্কে জড়ালে জরেজুল প্রথমে আশরাফুলকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন। এতে আশরাফুল চিৎকার শুরু করলে শামীমা তার ওড়না এবং সঙ্গে থাকা স্কচটেপ দিয়ে আশরাফুলের মুখ বেঁধে দেন। এভাবে মুখ বাঁধা থাকায় এবং জরেজুল ইসলামের আঘাতে এক পর্যায়ে আশরাফুল মারা যান।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাইকোর্টের সামনে ড্রামে রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুলের ২৬  টুকরা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন শুক্রবার আশরাফুলের বোন আনজিরা বেগম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে আশরাফুলের বন্ধু জরেজ মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে। এদের মধ্যে জরেজ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। অন্যদিকে শামিমাকে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) একটি টিম।






আর্কাইভ