শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২
Swadeshvumi
বুধবার ● ৫ নভেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » জোট প্রার্থীর নিজ দলের প্রতীকে ভোট বাধ্যতামূলকসহ একগুচ্ছ সংশোধনী
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » জোট প্রার্থীর নিজ দলের প্রতীকে ভোট বাধ্যতামূলকসহ একগুচ্ছ সংশোধনী
৪ বার পঠিত
বুধবার ● ৫ নভেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

জোট প্রার্থীর নিজ দলের প্রতীকে ভোট বাধ্যতামূলকসহ একগুচ্ছ সংশোধনী

বিশেষ প্রতিনিধি

---

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে। সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে কার্যত নির্বাচনী আইনের সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আপত্তি সত্ত্বেও, সংশোধিত আরপিওতে বলা হয়েছে নিবন্ধিত কোনো দল জোটে অংশ নিলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে।

এর পাশাপাশি ফেরারি আসামির অযোগ্যতা, মিথ্যা তথ্য দিলে এমপি পদ বাতিল, একক প্রার্থীর আসনে ‘না ভোট’, সমভোটে পুনর্র্নিবাচন, আইটি–সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং, ইভিএম বাতিলসহ একগুচ্ছ নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বিএনপি ‘জোট প্রতীক’ ধারা নিয়ে আপত্তি তুললেও জামায়াত ও এনসিপি এর পক্ষে মত দেয়। শেষ পর্যন্ত ‘জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট’ নীতি বহাল রেখেই অধ্যাদেশ প্রকাশ করা হয়।

???? মূল পরিবর্তন ও নতুন বিধান এক নজরে

১. জোট প্রার্থীর নিজ দলের প্রতীকে ভোট বাধ্যতামূলক

আরপিও’র ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধনে বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত দল জোটে অংশ নিলেও প্রার্থীকে নিজের দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। অর্থাৎ, একাধিক নিবন্ধিত দলের জোট গঠন হলেও বড় দলের প্রতীক ব্যবহারের সুযোগ থাকছে না।

২. পলাতক বা ফেরারি আসামির প্রার্থিতা বাতিল

নতুন উপধারা ১২(১)(এএ) অনুযায়ী, কোনো আদালত কর্তৃক ফেরারি বা ‘পলাতক’ ঘোষিত ব্যক্তি সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবেন। একইসঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা ‘লাভজনক’ পদে থাকলেও প্রার্থী হওয়া যাবে না।

৩. মিথ্যা তথ্য দিলে এমপি পদ বাতিল

মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের সর্বশেষ আয়কর রিটার্ন ও সম্পদের পূর্ণ বিবরণ জমা দিতে হবে। পরে মিথ্যা প্রমাণিত হলে নির্বাচিত এমপি পদও বাতিল করার ক্ষমতা থাকবে নির্বাচন কমিশনের হাতে।

৪. জামানত বৃদ্ধি

প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে, যাতে শুধুমাত্র দায়িত্বশীল ও যোগ্য প্রার্থীরাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।

৫. একক প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘না ভোট’

কোনো আসনে একজন বৈধ প্রার্থী থাকলে ভোটাররা ব্যালটে ‘না ভোট’ দিতে পারবেন। যদি ‘না ভোট’ বেশি হয়, তাহলে সেই আসনে পুনরায় ভোট হবে। তবে দ্বিতীয়বারও একই পরিস্থিতি হলে ওই প্রার্থী নির্বাচিত গণ্য হবেন।

৬. সমভোটে পুনর্র্নিবাচন

দুই বা ততোধিক প্রার্থীর ভোট সমান হলে লটারির পরিবর্তে শুধুমাত্র সমান ভোটপ্রাপ্তদের মধ্যে পুনরায় নির্বাচন হবে।

৭. ইভিএম ধারা বাতিল

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংক্রান্ত ২৬, ২৬এ, ২৬বি, ২৬সি ও ২৬ডি অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে কেবল ব্যালট পদ্ধতিতেই ভোটগ্রহণ হবে।

৮. পোস্টাল ভোটে আধুনিকীকরণ

প্রবাসী বাংলাদেশি, সরকারি চাকরিজীবী, কয়েদি ও নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা এখন থেকে আইটি–সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন। প্রতিটি ব্যালটে থাকবে একটি অনন্য শনাক্তকারী নম্বর—যা ব্যালটের ট্র্যাকিংয়ে ব্যবহার হবে।

৯. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা–নৌ–বিমান বাহিনী

অনুচ্ছেদ ২ সংশোধনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে সেনা মোতায়েনে ইসিকে প্রশাসনিক জটিলতায় পড়তে হবে না।

১০. ইসির হাতে ভোট বাতিলের ক্ষমতা

জোরজবরদস্তি, ভয়ভীতি বা দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের কারণে ইসি যদি মনে করে সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্ভব নয়, তবে নির্দিষ্ট কেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোট বাতিল বা স্থগিত করতে পারবে।

১১. আচরণবিধি লঙ্ঘনে কঠোর শাস্তি

নতুন বিধানে আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলও এই অপরাধে দায়ী হতে পারে।

১২. মিথ্যা সংবাদ ও এআই–নির্মিত কনটেন্টে শাস্তি

আরপিও’র নতুন ৭৩(এ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—নির্বাচনী সময়কালে মিথ্যা তথ্য, ছবি, ভিডিও বা এআই–নির্মিত বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট প্রচার দুর্নীতিমূলক অপরাধ। ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠান—সকলেই দায়ী থাকবেন।

???? ইসির বাড়তি ক্ষমতা ও স্বচ্ছতা

নতুন সংশোধনে সংসদ সদস্যের অযোগ্যতা নির্ধারণে ইসিকে একক এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। কোনো এমপি পরে অযোগ্য প্রমাণিত হলে ইসি স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই আসন শূন্য ঘোষণা করতে পারবে।

এছাড়া রাজনৈতিক দলের অনুদান ও তহবিলের হিসাব ওয়েবসাইটে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিও অনুমোদিত করা হয়েছে—যা নির্বাচনী স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে বলে আশা করছে কমিশন।

???? রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

নির্বাচন কমিশনের এই অধ্যাদেশ নিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি অসন্তোষ জানিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সাংবাদিকদের বলেন,

“নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই এত গুরুত্বপূর্ণ আইনি পরিবর্তন এনেছে এটি কোনো বিবেচনাসম্মত পদক্ষেপ নয়।”

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দলটি জামানত কমানো ও নির্বাচনী ব্যয় হ্রাসসহ ৩১ দফা দাবি সিইসির কাছে উপস্থাপন করেছে।

???? সামগ্রিক বিশ্লেষণ

নতুন আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশে একদিকে যেমন আইনগত শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতা জোরদার হয়েছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক সংলাপের ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বিশ্লেষকদের মতে, মিথ্যা তথ্য, ফেক নিউজ ও এআই–নির্মিত কনটেন্ট প্রতিরোধে কঠোর বিধান, একক প্রার্থীর আসনে ‘না ভোট’ চালু, ইভিএম বাতিল ও ব্যালট পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন, এসব পরিবর্তন বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ করতে পারে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক আলোচনা ছাড়া এই আইন পরিবর্তন নির্বাচনের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের।






আর্কাইভ