শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
Swadeshvumi
রবিবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » আইন-শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি রক্ষা ইসির প্রধান চ্যালেঞ্জ
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » আইন-শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি রক্ষা ইসির প্রধান চ্যালেঞ্জ
১১ বার পঠিত
রবিবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

আইন-শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি রক্ষা ইসির প্রধান চ্যালেঞ্জ

---

শায়লা শবনম

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে জামিনে মুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তৎপরতা এবং সম্ভাব্য চোরাগোপ্তা হামলা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং আচরণবিধি রক্ষা— এই দুই বিষয়ই ইসিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে কর্মকর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে বর্তমান নাসির কমিশন। বিশেষ করে তফসিলের পরদিন গত শুক্রবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ইসির উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে এ বিশেষকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন।

আগারগাঁয়ওয়ের নির্বাচন ভবনে বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, তফসিল ঘোষণার পর থেকে উদ্ভূত সার্বিক পরিস্থিতি, সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং করণীয় কৌশল নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় সাম্প্রতিক সময়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর চোরাগোপ্তা হামলা, লক্ষ্মীপুরে নির্বাচন অফিসে হামলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ইসি সানাউল্লাহ জানান, তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়, তবে হামলার পেছনে এমন তথ্য সামনে এসেছে, যা নির্বাচন ও কমিশনের স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। আলোচনায় উঠে এসেছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেছিলেন এবং তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও অপরাধমূলক অতীত রয়েছে। এই কমিশনার জানান, আইন-শৃঙ্খলার পাশাপাশি এবার রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি রক্ষাকেও তারা চ্যালেঞ্জ মনে করছেন।

---

জামিনে মুক্ত সন্ত্রাসীরাই বড় উদ্বেগ

বৈঠকে জানা গেছে, আগে গ্রেপ্তার হওয়া বহু চিহ্নিত সন্ত্রাসী বর্তমানে জামিনে মুক্ত। নির্বাচনকালীন সময়ে তাদের তৎপরতা বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আলোচনায় উঠে এসেছে, চোরাগোপ্তা হামলাগুলো কোনো বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ কি না, নাকি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এছাড়া দুটি উপজেলায় নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের চেষ্টাও বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে।

হামলা রোধে কঠোর অবস্থান ও ‘রেবেল হান্ট’

নির্বাচন কমিশনার জানান, বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল—এই ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি রোধ করা। সব বাহিনীর পক্ষ থেকে একযোগে বার্তা এসেছে—যারা নির্বাচন বানচাল বা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে, তারা ব্যর্থ হবে।

সন্ত্রাসীদের তৎপরতা রোধে ইতিমধ্যেই অধিক সংখ্যক চেকপোস্ট বসানো, জামিনে মুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অবৈধ ও হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার, এবং ‘রেবেল হান্ট’ অভিযান জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ অভিযান সমন্বিতভাবে চলবে।

গোয়েন্দা নজরদারি ও সীমান্ত সতর্কতা

বৈঠকে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার এবং বিভিন্ন বাহিনীর গোয়েন্দা তথ্য সমন্বয়কেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বড় ধরনের নাশকতার সম্ভাবনা যাচাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আচরণবিধি রক্ষা চ্যালেঞ্জ

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে সহযোগী সেজে নাশকতাকারীরা ভেতরে অনুপ্রবেশ করতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক ও উসকানিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা সন্ত্রাসীদের সহায়তা করছে। বিদ্যমান সাইবার সিকিউরিটি কাঠামো সক্রিয়ভাবে তা মোকাবিলা করছে।

নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সময়মতো

সানাউল্লাহ বলেন, হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা। তবে নির্বাচন কমিশন ও সরকার যৌথভাবে সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ করবে। নির্বাচন সময়মতো হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ দৃঢ়তা দেখাবে। প্রার্থীদের অস্ত্রের লাইসেন্স বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

---

নির্বাচনি অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি

ইসি ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য নির্বাচনি অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি ভোটকেন্দ্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও অভিযোগ যাচাই করবে এবং প্রার্থী বা কর্মী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সামারি ট্রায়ালের মাধ্যমে জরিমানা বা কারাদণ্ড দিতে পারবে।

প্রাথমিকভাবে সীমিত সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ থাকবে, ভোটের দিনে সংখ্যা ধাপে ধাপে বাড়ানো হবে। তারা নির্বাচনি এলাকায় ঘুরে ঘুরে আচরণবিধি তদারকি করবেন এবং ফলাফল ও পরিস্থিতি প্রতিবেদন ইসিকে উপস্থাপন করবেন।

ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। ২১ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। নির্বাচনি প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি থেকে এবং চলবে ভোটগ্রহণের দিন ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে সারাদেশে একযোগে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন কমিশন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে—সন্ত্রাসীরা যেন পার পেয়ে না যায়, নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকে এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রতিহত হয়। নির্বাচনি অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি মাঠপর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করবে।



বিষয়: #



আর্কাইভ