মঙ্গলবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » প্রধান সংবাদ » শিক্ষায় অচলাবস্থা, মহাবিপাকে শিক্ষার্থীরা
শিক্ষায় অচলাবস্থা, মহাবিপাকে শিক্ষার্থীরা
শায়লা শবনব
দেশের শিক্ষায় দীর্ঘদিনের সঞ্চিত অসন্তোষ এবার বিস্ফোরিত রূপ নিয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্তরের শিক্ষকদের একযোগে কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণায় সারাদেশের শিক্ষা কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বেতন-গ্রেড, পদোন্নতি, টাইম স্কেল, উচ্চতর গ্রেডসহ নানা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষকরা; আর তার সরাসরি ধাক্কায় বিপাকে পড়েছে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী, যাদের বার্ষিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে এসএসসি নির্বাচনী পর্যন্ত সব মূল্যায়নই এখন অনিশ্চয়তার ঘোরে।
# শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে প্রাথমিক–মাধ্যমিক স্থবির, এসএসসি পরীক্ষা স্থগিতের শঙ্কা।
# আন্দোলনে একাট্টা শিক্ষকরা, সরকারের হুঁশিয়ারি কার্যত উপেক্ষিত।
# দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থী-অভিভাবক, অন্তবর্তী সরকারকেই দায়ী করছেন শিক্ষাবিদরা।
এখনকার সংকট শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা বা বেতন কাঠামো নিয়ে টানাপোড়েন নয়। এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বল অবকাঠামো, দীর্ঘসূত্রতা এবং নীতিনির্ধারণী ব্যর্থতার বহমান প্রতিচ্ছবি। শিক্ষক শিক্ষার্থী সরকার এই তিন পক্ষের টানাপোড়ন যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে ভবিষ্যৎ শিক্ষাবর্ষই বড় ধরনের স্থবিরতার ঝুঁকিতে পড়েছে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদরা।
দুই স্তরের শিক্ষক একাট্টা, আটকে আছে বার্ষিক পরীক্ষা
গতকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে সরকারিকৃত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চার দফা দাবিতে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। বেতন-গ্রেড, স্থবির পদোন্নতি, টাইম স্কেল এবং বকেয়া আর্থিক সুবিধা এসব বিষয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা ও কোনো অগ্রগতি না থাকায় তারা ‘লাগাতার কর্মবিরতি’ ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে ঢাকার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে নোটিশ টাঙিয়ে পরীক্ষাবাতিল ঘোষণা করা হয়। স্কুলে এসে গেট থেকে ফিরে যাওয়া বিভ্রান্ত অভিভাবকদের ক্ষোভ ছিল প্রকট “পরীক্ষা হবে কি হবে না এমন অনিশ্চয়তা বছরের পর বছর দেখিনি।”
অন্যদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২৭ নভেম্বর থেকে কর্মবিরতিতে আছেন। তাদের তিন দফা দাবি— ১০ম গ্রেডে বেতন উন্নীতকরণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সুবিধা এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি
দুই স্তরের আন্দোলন আলাদা হলেও ফলাফল এক দেশের শিক্ষা কার্যক্রম অচল। শিক্ষাবিদদের মতে, এ পরিস্থিতিতে এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা এখন “বাস্তবসম্মত ও গুরুতর”।

বছরজুড়ে পড়াশোনা করে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে এসে হঠাৎ স্থগিতের চাপে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। বহু শিক্ষার্থী বলছে, ‘পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে এমন অনিশ্চয়তা আমাদের ভীষণ ভয় ধরিয়েছে।’ অভিভাবকেরা মনে করছেন, এই অচলাবস্থা সরকারি শিক্ষার প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমিয়ে দেবে। এক কর্মজীবী মা শারমিন আক্তার বলেন— “শিক্ষকরা সম্মান পান না, বেতন কম—এটা ঠিক। কিন্তু সেটা ঠিক করতে গিয়ে পরীক্ষাই বন্ধ রাখা যায় না। শেষ পর্যন্ত ক্ষতি হচ্ছে আমাদের সন্তানদের।” গৃহিণী লায়লা খানমের মতে, “শিক্ষক নিশ্চিত না থাকলে শিক্ষার পরিবেশ কখনো ভালো হতে পারে না। সমাধান দরকার দ্রুত।”
সরকারের নির্দেশ উপেক্ষিত
সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি “সরকারি চাকরি আইন” বিরোধী বলে রবিবার রাতে বিজ্ঞপ্তি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে মাউশি সব স্কুলকে যথাসময়ে বার্ষিক ও নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক–কর্মকর্তাদের উপস্থিতির তালিকা দুপুর ১২টার মধ্যে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয়— “দায়িত্বহীনতা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে গণ্য হবে।”
কিন্তু মাঠপর্যায়ের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কর্মবিরতি চলছে, পরীক্ষা স্থগিত, কেন্দ্রগুলোতে বিশৃঙ্খলা। রাজবাড়ীতে এক শিক্ষককে অভিভাবকদের লাঞ্ছনার ঘটনাও উত্তেজনা বাড়িয়েছে। শিক্ষক সংগঠনগুলো বলছে, ‘সংকট ব্যবস্থাপনায় সরকারের দুর্বলতা’ মাঠে বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, “শিক্ষকদের দাবি গুরুত্বপূর্ণ, তবে শিক্ষার্থীর স্বার্থই আমাদের কাছে সর্বোচ্চ। পরীক্ষার বিকল্প নেই।”
শিক্ষাবিদদের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ
শিক্ষা সংকট এখন প্রশাসনিক সীমা পেরিয়ে রাজনৈতিক ও কাঠামোগত সংকটে রূপ নিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এ পরিস্থিতির জন্য অন্তবর্তী সরকারই দায়ী।” তার মতে— সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিলে চাপ কমত। ডজনখানেক স্টেকহোল্ডার এখন সরকারের কাছে দাবি নিয়ে ‘পেয়ে বসেছে’। শিক্ষক আন্দোলন সময়োপযোগী নয়; এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। শিক্ষার্থীরা মানসিক, শিক্ষাগত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা খাবে। তিনি আরও বলেন, “দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে পরবর্তী সরকারও চাপের মধ্যে থাকবে।”
শিক্ষাবিদরা সতর্ক করছেন—বার্ষিক পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত হলে, এসএসসি নির্বাচনী স্থগিত হলে, প্রাথমিক-মাধ্যমিকের সাপ্তাহিক পাঠদান স্থবির হলে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, পাঠ্যক্রম, সময়সূচি—সবকিছুই অচলাবস্থায় পড়বে। ফলে দেশের শিক্ষা খাত দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির ঝুঁকিতে।
এখন প্রশ্ন হলো সরকার কি দ্রুত আলোচনায় বসে সমাধান বের করবে? শিক্ষকরা কি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় কর্মসূচি শিথিল করবেন, নাকি দেশের শিক্ষা আরও এক দফা অচলাবস্থার দিকে যাবে এসব সংকটের মূলে রয়েছে চলমান দাবি–সংকট এবং সমন্বয়হীনতা। আর এর দায় এড়ানোর সুযোগ কোনো পক্ষেরই নেই—না সরকার, না শিক্ষক, না ব্যবস্থাপনা কাঠামো।
পরিস্থিতি তাই আরও বড় অস্থিরতার আগে সমাধান দাবি করছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার স্বার্থেই।





দ্রুত নির্বাচন কমিশন সার্ভিস বাস্তবায়নের দাবিতে উপজেলা কর্মকর্তাদের ক্ষোভ
জিয়া পরিবারের প্রতি সহমর্মিতায় তারেক রহমানের কৃতজ্ঞতা
ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয় শতাধিক
ডেঙ্গুতে আরও দুজনের মৃত্যু
এলপিজির দাম বাড়ল ৩৮ টাকা
বিশ্ব রেকর্ডগড়া তামিমের ফিফটি
ভোটারদের আস্থাহীনতা কাটিয়ে কেন্দ্রে আনার পরামর্শ ইইউ’র
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৮ বছরেও পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি অধরা! 
