শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ন ১৪৩২
Swadeshvumi
রবিবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » সম্ভাব্য প্রার্থীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় উদ্বিঘ্ন ইসি
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » সম্ভাব্য প্রার্থীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় উদ্বিঘ্ন ইসি
৫ বার পঠিত
রবিবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সম্ভাব্য প্রার্থীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় উদ্বিঘ্ন ইসি

শায়লা শবনম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরপরই সম্ভাব্য এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিবর্ষণের ঘটনা আসন্ন নির্বাচন ঘিরে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভেতরেও বেড়েছে চিন্তা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কমিশন এখন সাঁড়াশি অভিযানের মতো কঠোর পদক্ষেপের দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে।

তফসিল ঘোষণার পরই রক্তাক্ত বার্তা

গত ১১ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেন। কিন্তু তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগরে মাথায় গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয় ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। প্রকাশ্য সড়কে এমন ঘটনা নির্বাচনি মাঠে সহিংসতার আশঙ্কাকে সামনে এনে দিয়েছে।

কে এই ওসমান বিন হাদি

ঝালকাঠির নলছিটি থেকে উঠে আসা ওসমান বিন হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকার পর তিনি ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে ‘ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’-এর আন্দোলনে যুক্ত হন। ভারত ও আওয়ামী লীগবিরোধী অবস্থান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব বক্তব্যের কারণে অল্প সময়েই তিনি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।

হামলার ঘটনা ও বর্তমান অবস্থা

শুক্রবার দুপুরে বিজয়নগরে প্রচারণার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুজন দুর্বৃত্ত খুব কাছ থেকে হাদির মাথায় গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।

নির্বাচন কমিশনের উদ্বেগ ও অবস্থান

এই হামলার পর নির্বাচন কমিশনের ভেতরে উদ্বেগ স্পষ্ট। জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ঘটনাটিকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বললেও একে ‘অ্যালার্মিং’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগেই সশস্ত্র বাহিনীসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সাঁড়াশি অভিযানের দিকে ইসি

তফসিল ঘোষণার পরই এমন ঘটনা ঘটায় সামনে পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে—এ প্রশ্নে ইসি আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, দ্রুত কমিশনের বৈঠকে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কড়া বার্তাও দেওয়া হবে।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন

হাদির ওপর হামলা ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনের শুরুতেই সম্ভাব্য প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও সরকার দুষ্কৃতকারীদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে, তবু নির্বাচনি মাঠে সহিংসতা ঠেকানো কতটা সম্ভব—সে সংশয় কাটেনি।

---

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তার আগেই মনোনয়ন, প্রচার ও প্রতীক বরাদ্দসহ গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো সম্পন্ন হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ও পুরো নির্বাচনি প্রক্রিয়াই বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

হাদির ওপর হামলার ঘটনা শুধু একজন প্রার্থীর ওপর আক্রমণ নয়, এটি আসন্ন নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে একটি অশনিসংকেত যা নির্বাচন কমিশনের জন্য বাড়তি সতর্কবার্তা হয়ে এসেছে।






আর্কাইভ