রবিবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট: আজই চূড়ান্ত হতে পারে ইসির তফসিলের খসড়া
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট: আজই চূড়ান্ত হতে পারে ইসির তফসিলের খসড়া

শায়লা শবনম
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়— একসঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন। সময়মতো নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর বাড়ছে বিভিন্ন দল ও সংস্থার চাপ। আবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় এনে তফসিল ঘোষণায় সময়ক্ষেপণের আনুষ্ঠানিক অনুরোধও এসেছে। সব মিলিয়ে বহু চাপ-আকাঙ্ক্ষার এই পরিবেশে আজ রবিবার কমিশন সভায় নির্ধারণ করে দেবে তফসিলের খসড়ার ভবিষ্যৎ। ধারণা করা হচ্ছে, চাপ সামলে এই সভায় ইসির তফসিলের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারে সংস্থাটি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট— এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট একই দিনে আয়োজনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে। আজ রবিবার ভোটের তফসিলের খসড়াসহ সার্বিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে ১০ম কমিশন সভায় বসবে সংস্থাটি। সকাল সাড়ে ১০টায় নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই সভায় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত থাকবেন। ইসির পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা আর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এই কমিশন সভায় ভোটের দিনক্ষণসহ তফসিলের বিষয়ে সবাই একমত হলে আগামী ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন এই কমিশন। এরপর বিশেষ কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব না হলে যে কোনো সময় ঘোষিত হতে পারে বহুপ্রতীক্ষিত নির্বাচনি তফসিল।
কমিশনের আলোচ্যসূচি: দশ দফা প্রস্তুতি
আজকের সভায় কেবল তফসিল নয়, আরও ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন— ভোটের দিনক্ষণ ও পুরো সময়সূচি, গণভোটসহ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতি, মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়, যোগাযোগ ও নিরাপত্তা, ভোটার তালিকা ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, স্মার্ট কার্ডের কারিগরি হালনাগাদ করাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়।
কাউন্টডাউন: একসঙ্গে দুই ভোটের তফসিল
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের জন্য ইসি প্রায় সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন করেছে। আজ রবিবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত হবে কমিশনের ১০ম সভা, যেখানে তফসিলের খসড়াসহ সার্বিক প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যালোচনা করা হবে। পূর্বঘোষণা অনুসারে, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার কথা এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট— অর্থাৎ সময়ের ব্যবধান হবে প্রায় দুই মাস।
সব নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত থেকে আজকের বৈঠকে তফসিলের দিনক্ষণ নির্ধারণে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করবেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পর যেকোনো সময় ঘোষিত হতে পারে বহুপ্রতীক্ষিত তফসিল। ইসির বিভিন্ন সূত্র বলছে, সম্ভাব্য তফসিল ঘোষণার তারিখ ১১ ডিসেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে। ভোটগ্রহণের দিন ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ— ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন হতে পারে সাধারণ রীতি অনুসারে।
বিগত দিনে তফসিল ঘোষণার রীতি
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। সেই ভোটগ্রহণের দিন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। তফসিল থেকে ভোটগ্রহণের সময়ের ব্যবধান ছিল ৫৫ দিন। এছাড়া গত ১২টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দ্বিতীয়, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছে রবিবার। অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচন হয়েছে সোমবার। প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম সংসদ নির্বাচন হয়েছে বুধবার। আর চতুর্থ ও ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন বৃহস্পতিবার হয়েছে।
সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, আর ভোট হয় পরের বছরের ৭ জানুয়ারি। ব্যবধান ছিল ৫৩ দিনের। মনোনয়নপত্র জমার সময় ছিল ১৪ দিন, বাছাই ছিল চার দিন, প্রত্যাহারের শেষ সময়ের জন্য ছিল ১৩ দিন (এর মধ্যে আপিল দায়ের পাঁচ দিন, নিষ্পত্তি ছয় দিন)। আর প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারের সময় ছিল ১৯ দিন এবং প্রচার শেষের ৪৮ ঘণ্টা পর ভোট। সেই ভোটগ্রহণ হয় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
তফসিলকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপ
নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলের অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন হলেও একটি বিষয়ে সবার সুর মিলেছে— স্থিতিশীলতা বজায় রেখে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা।
বিএনপি জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসাজনিত বিষয় সত্ত্বেও সময়মতো তফসিল ঘোষণায় তাদের আপত্তি নেই।
এনসিপি বলেছে, প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিলে তফসিলকে ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে; তবে তফসিল পিছানোরও পক্ষে নয় দলটি।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ: শেষ আনুষ্ঠানিক ধাপ
১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচন প্রস্তুতির সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরবে কমিশন। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ঘোষিত হবে তফসিল। ইতোমধ্যে বিটিভি ও বেতারকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুই ভোট একসঙ্গে— বাড়তি কর্মযজ্ঞ
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট— ফলে কাজের চাপ দ্বিগুণ। দু’ধরনের ব্যালট পেপার, আলাদা ব্যালট বাক্স, অতিরিক্ত বুথ, নিরাপত্তা সদস্য ও কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থায় বিশেষ নজর।
দেশের ৪৩ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রে ১২ কোটিরও বেশি ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ইসি ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রশাসনিক রদবদল করেছে। ব্যালট পেপার ছাপা হবে একমাত্র সরকারি প্রিন্টিং প্রেসে, যা নিয়ে দলগুলোকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার তালিকাও প্রকাশ করা হবে।
নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। প্রস্তুতি প্রায় শেষ। রাজনৈতিক সংলাপ, প্রশাসনিক কাজ, কারিগরি প্রস্তুতি— সবকিছুই এখন আটকে আছে একটি ঘোষণার অপেক্ষায়: জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল। আজকের কমিশন সভাই ঠিক করবে, এই অপেক্ষার শেষ কবে।
বিষয়: ## জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট :# ইসির তফসিলের খসড়া





তফসিল ঘোষণার দিন-ক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি: ইসি সচিব
১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ ইসির
যথাসময়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় আপত্তি নেই বিএনপির
একসঙ্গে দুই ভোটের তফসিল
স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা হবে: ইসি সানাউল্লাহ
চলছে দুই ভোটের প্রস্তুতি: ভোটগ্রহণ ৯ ঘণ্টা, শিগগিরই চূড়ান্ত তফসিল ঘোষণা
দ্রুত নির্বাচন কমিশন সার্ভিস বাস্তবায়নের দাবিতে উপজেলা কর্মকর্তাদের ক্ষোভ
ভোটারদের আস্থাহীনতা কাটিয়ে কেন্দ্রে আনার পরামর্শ ইইউ’র
জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবি 
