শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২
Swadeshvumi
শুক্রবার ● ৭ নভেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে কী দেখা যাবে জাতীয় পার্টিকে!
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে কী দেখা যাবে জাতীয় পার্টিকে!
৪ বার পঠিত
শুক্রবার ● ৭ নভেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে কী দেখা যাবে জাতীয় পার্টিকে!

শায়লা শবনম

---

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির উত্তাপ যত বাড়ছে, ততই ঘনীভূত হচ্ছে জাতীয় পার্টিকে ঘিরে বিতর্ক। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধিত দলগুলোর তালিকায় এখনো দলটির নাম অক্ষুন্ন থাকলেও, তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হবে, দলটির লাঙ্গল ……? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি–জামায়াতবিরোধী আন্দোলনের সমান্তরাল কৌশল, অন্যদিকে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য সক্রিয় একাধিক দল, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে।

এদিকে, ইসির সদ্য সংশোধিত ১১৯টি প্রতীকের তালিকায় এখনো সংরক্ষিত আছে জাতীয় পার্টির ঐতিহ্যবাহী ‘লাঙ্গল’ প্রতীক। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, জাতীয় পার্টিকে বাদ রেখে নির্বাচন করলে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোটই দেবে না। নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের মতে, ভোটে অংশ নিতে এখনো পর্যন্ত দলটির জন্য কোনো আইনি বাধা নেই। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কমিশনের কোনো মন্তব্য নেই।

জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দলের অবস্থান ও কর্মকাণ্ড

বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ামী লীগের ছায়া দল’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন সম্প্রতি বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টি মানেই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না গেলেও যদি জাপা যায়, সেটি আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণেরই সমান।’ এই দাবিকে সামনে রেখেই কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে জাপাকে অযোগ্য ঘোষণা করে ভোটে না নেওয়ার জন্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির কার্যালয় ও কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে, যা নির্বাচনের আগে অস্থিরতা আরও বাড়াচ্ছে।

দলটির নেতাদের বক্তব্য

‘উপজেলা দিবস’ উপলক্ষে গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘একপক্ষ বাদ দিয়ে ঐকমত্যের নামে আরেক পক্ষকে সুবিধা দেওয়া গণতন্ত্র নয়। আর ষড়যন্ত্র করে তার দলকে বাদ রেখে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছে অন্তর্র্বতী সরকার। কারণ তারা নিরপেক্ষ নয়। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টিকে বাদ রেখে নির্বাচন করার আইনি কোন ভিত্তি দেখছি না। সে ধরনের নির্বাচন করার চেষ্টা গণতন্ত্রের জন্যও হুমকি। ষড়যন্ত্রকারীরা সেই চেষ্টা করলে নির্বাচনে সহিংসতা বাড়বে- দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোটই দিতেই যাবে না। পুরো নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমি মনে করি, নির্দলীয় বা সর্বদলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়।’ এসময় ইসির ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নিবন্ধিত দল হওয়া সত্ত্বেও সরকারের মতো ইসিও তার সংলাপের বাইরে রেখেছে- যা নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আগামী নির্বাচনে ইসিকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা আরও নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করবেন কিনা।’

এদিকে, জাতীয় পার্টির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনোয়ারুল ইসলাম সরকার স্বদেশভূমিকে বলেছেন, ‘দলটি এখনো আমাদের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। নিবন্ধিত দল হিসেবে তাদের ভোটে অংশ নিতে আইনি কোনো বাধা নেই। তাদের প্রতীক ‘লাঙ্গল’ রয়েছে ইসির সংরক্ষিত তালিকায়। তার মতে- ‘যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আদালত বা কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে, ততক্ষণ জাতীয় পার্টি ভোটে অংশ নিতে পারবে। বর্তমানে তাদের প্রতীক সংরক্ষিত রয়েছে এবং আইনত তারা প্রার্থী দিতে পারে।’ তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত কমিশন দলটির ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট অবস্থান নেয়নি। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমাদের নয়। আমরা শুধু আইন অনুযায়ী কাজ করব।’

আইনি ও প্রতীক তালিকায় দলটির অবস্থান

নির্বাচন কমিশনের ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত সংশোধিত প্রতীক তালিকায় মোট ১১৯টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই তালিকায় পুরোনো দলগুলোর প্রতীকগুলোর পাশাপাশি নতুন যুক্ত হয়েছে ২০টি প্রতীক। বাদও পড়েছে ১৬টি। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— জাতীয় পার্টির ‘লাঙ্গল’ প্রতীক এখনো তালিকায় অক্ষুণ্ণ। ফলে আইনি বা প্রশাসনিকভাবে দলটি এখনো ভোটের উপযুক্ত।

তবে দলটিতে বিভক্তি, নেতৃত্ব ও প্রতীক নিয়ে সংকট ইসির কাছেও স্পষ্ট। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় পার্টির নাম শুনলে কনফিউজড হই। কারণ সেখানে অন্তত হাফ ডজন দল আছে, সবাই ‘লাঙ্গল-এর দাবিদার।’

জাতীয় পার্টির ইতিহাস ও নিবন্ধনের পটভূমি

১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। দলটি দ্রুতই দেশের রাজনীতিতে একটি মূলধারার শক্তি হয়ে ওঠে। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে তৎকালীন সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন জাতীয় পার্টি (এরশাদ)-কে নিবন্ধন দেয়। নিবন্ধন নম্বর ৪- আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের পরেই স্থান পায় দলটি।

দলটির নির্বাচনি প্রতীক ‘লাঙ্গল’ যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে উন্নয়ন, কৃষি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত। দলটির প্রতিষ্ঠা এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার অভ্যন্তরীণ বিভাজন প্রকট হয়। তার ভাই জিএম কাদের ও স্ত্রী রওশন এরশাদের অনুসারীরা আলাদা শিবির গড়ে তোলেন। পরে আবার বিদিশা এরশাদপন্থীরাও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি, আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বিএনপি (বিজেপি) এবং অন্যান্য অংশগুলো আলাদা প্রতীকে রাজনীতি করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ঘিরে যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল একটি দলের অস্তিত্ব নয় বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ভবিষ্যতের দিকেও ইঙ্গিত দেয়। একদিকে দলটিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে বিরোধী জোটগুলোর তৎপরতা, অন্যদিকে আইনি বৈধতা বজায় রেখে ইসির নিরপেক্ষ অবস্থান এই দুই বাস্তবতার মাঝে ঝুলে আছে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ। শেষ পর্যন্ত দলটির ‘লাঙ্গল’ প্রতীক ভোটের ব্যালটে থাকবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে ইসির তফসিল ঘোষণার পর।






আর্কাইভ