রবিবার ● ৩০ এপ্রিল ২০২৩
প্রচ্ছদ » জাতীয় » আধুনিক গতিশীল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
আধুনিক গতিশীল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
![]()
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ
চিকিৎসা শিক্ষায় স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যয়ন ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার প্রথম তিন তারকা শাহবাগ হোটেলের জায়গায় ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চ (আইপিজিএমএন্ডআর) প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণার দায়িত্ব প্রাপ্ত হলেও এই প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা ছিল না। সেসময় ডিগ্রি প্রদান করত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আইপিজিএমএন্ডআর কার্যক্রমসহ অনেকগুলি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের এমবিবিএস ডিগ্রি প্রদান করত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়।
২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ২৬তম বছরে পদার্পন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সকলকে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন এবং সর্বপ্রথম আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক দেশের জন্ম হতো না। কৃতজ্ঞতা জানাই জাতির জনকের সুযোগ্যা কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে যিনি জনগণের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং দেশের চিকিৎসা, শিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে তৎকালীন আইপিজিএমএন্ডআর কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত করার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম স্বতন্ত্র পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি অধ্যাপক এম এ কাদেরীর সময় প্রথমে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন), (ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্র্রার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। পরে পরিচালক (হাসপাতাল) হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। পাবলিক হেলথ ফ্যাকাল্টির ডিনের দায়িত্বও পালন করি। এছাড়াও দীর্ঘদিন সিন্ডিকেট সদস্য ও একাডেমিক কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করি এবং আমি ছিলাম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ২০১৫-২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। সে হিসেবে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম। সর্বশেষ গত ২০২১ সালের ২৯ মার্চ আল্লাহর অশেষ রহমতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আগামী তিন বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে মনোনীত করেছেন এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব আব্দুল হামিদ আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আর ২ লাখ মা-বোনের সম্মানের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক পুনর্বাসন ও উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করলে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম সাহেবকে তৎকালীন আইপিজিএমএন্ডআর এর উন্নয়নের সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তৎকালীন আইপিজিএমএন্ডআর এ ভর্তি ছিলেন। অধ্যাপক ডা. শেখ আশরাফ আলীর তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। বেগম মুজিব ভর্তি থাকার সুবাদে সে সময়ে বঙ্গবন্ধু এখানে আগমন করেন। আর এ সুযোগে চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা প্রবর্তন এবং দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির জন্য আইপিজিএমএন্ডআর’কে আরো উন্নত করা এবং বিসিপিএস প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বে তৎকালীন সময়ে দেশের ১৩টি সরকারি ও ৫ টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং নিপসমসহ ৫টি পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশের চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান উন্নয়নের যথেষ্ট ভূমিকা পালনে সক্ষম হচ্ছিল না। বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন দেশে একটি স্বতন্ত্র ও গবেষণা সমৃদ্ধ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও সকল মেডিকেল কলেজের সায়ত্ত্বশাসন দাবি করে আসছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, ’৬৯ এর ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দেওয়া ১১ দফার মধ্যেও চিকিৎসকদের দাবির কথা উল্লেখ ছিল। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মেডিকেল শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও আইপিজিএমআর শিক্ষক সমিতি একটি স্বতন্ত্র ও গবেষণা সমৃদ্ধ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। প্রত্যেকটি সংগঠনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ায় এদেশের চিকিৎসক সমাজ এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নে তাদের সকল প্রত্যাশা পূরণের ভরসাস্থলের সন্ধান পান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশের চিকিৎসক সমাজের দীর্ঘ দিনের ন্যায্য দাবি যেমন বাস্তবায়ন করছেন, তেমনি এদেশের উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অগ্রযাত্রার সূচনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম স্বতন্ত্র পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান চিকিৎসক সমাজ কৃতজ্ঞতার সাথে চিরদিন স্মরণ করবে। এছাড়াও তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মরহুম সালাহউদ্দিন ইউসুফ, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. এম আমানুল্লাহ ও স্বাস্থ্য সচিব মোহাম্মদ আলীর অবদান উল্লেখযোগ্য।
জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ আন্তর্জাতিক মান অর্জন করে দেশের আপামর জনসাধারণের সুচিকিৎসায় নিয়োজিত হবেন এ আকাক্সক্ষা নিয়ে যে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরের মাথায় ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর কেবলমাত্র হীন রাজনৈতিক সংকীর্ণতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে আবারো আইপিজিএমআর করার উদ্যোগ নেয় বিএনপি-জামাত জোট সরকার। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করেছিলাম তাদের বিরুদ্ধে নানাবিধ মামলা-হামলা করেছিল তৎকালীন সরকারের লেজুড়ভিত্তিক চিকিৎসক সংগঠন ড্যাব ও কর্মচারী গোষ্ঠী। এহেন ন্যাক্কারজনক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ দেশের সকল পেশাজীবী ও আপামর জনসাধারণ তীব্র ক্ষোভ ও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তীব্র আন্দোলনের ফলে বিএনপি-জামাত সরকার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবুও ক্ষোভের বশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলে সংক্ষেপে বিএসএমএমইউ লিখে পরিচিতি দেয়। এমনকি তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকা থেকে গাজীপুর, টুঙ্গিপাড়া বা অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার হীন উদ্যোগ গ্রহণ করে। এদেশের জনসাধারণের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আবারও ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সেলেন্সে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারডেম সংলগ্ন বেতার ভবনের জমি ও হাসপাতালের উত্তর পাশের ১২ বিঘা জমির স্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে কয়েকশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ সহায়তা ও দিকনিদের্শনায় খুব দ্রুত নতুন কেবিন ব্লক সম্প্রসারণ, অনকোলজি ভবন, নতুন বহিঃবিভাগ, আধুনিক আইসিইউ, ওটি কমপ্লেক্স, মেডিকেল কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান, চাকরিসহ বিভিন্নক্ষেত্রে কোটা প্রবর্তনসহ নানামূখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এরই অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেল গঠন করা হয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা, কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা অল্প খরচে করা এবং আলাদা কেবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে চান্সপ্রাপ্ত বেসরকারি ছাত্র/ছাত্রীদের মাসিক সম্মানি ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকার উন্নত করা হয়। সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কোরিয়া সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার ১ হাজার শয্যাবিশিষ্ট কোরিয়া মৈত্রী বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে; যা এ সরকারের আরও একটি সাফল্য।
আমি আনন্দের সাথে জানাতে চাই, জাতির পিতার নামে এ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বসেরা সেবা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। স্পেনের সিমাগো এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস এ দুটো বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা মানসম্মত চিকিৎসা এবং গবেষণার জন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাংলাদেশ পঞ্চম স্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ার মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানের মর্যাদা দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০৫টি পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে। অন্যান্য ৪১টি মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে-এর মধ্যে ৬২টি রেসিডেন্সি কোর্স রয়েছে। চালু হয়েছে এমএসসি নার্সিং কোর্স। বাংলাদেশের ছাত্রদের বাইরেও ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, সোমালিয়া, কানাডা, ইয়েমেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ১১টি দেশের প্রায় ৩৫০ বিদেশি ছাত্র বিভিন্ন কোর্সে লেখাপড়া করছেন।
প্রতিদিন এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রায় ৮ হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করে সন্তুষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে এখন বিভিন্ন ইউনিটসহ ৫৭টি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ। আরো সুশৃঙ্খল এবং ডিজিটাল করা হয়েছে আর্থিক ব্যবস্থাপনা। হাসপাতালটি এখন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণ, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাবৃন্দ, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও এখানে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশের সকল মানুষের কাছে পরিগণিত হয়েছে চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য আস্থাস্থল হিসেবে।
রোগীদের আরো উন্নত চিকিৎসা প্রদান করার লক্ষ্যে আমরা এরই মধ্যে চালু করেছি ভিট্রিও রেটিনা, গ্লকোমা, কর্নিয়া, অকুলোপ্লাস্টি, ক্যাটারেক্ট ও রিফ্রেকটিভ সার্জারি, অথোস্কোপিক ও অর্থোপ্লাস্টি, হ্যান্ড এন্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি, শিশু এন্ডোক্রাইনোলজি, জেনারেল রিউম্যাটোলজি, ইমিউনো রিউম্যাটোলজি, ইলেক্ট্রোকাডিওলজি, ইকোকাডিওগ্রাফি, এডাল্ট কনজিনিটাল হার্ট ডিজিজসহ ১৫টি ডিভিশন খোলা হয়েছে। এছাড়া সার্জিক্যাল অনকোলজি, কলোরেক্টাল সার্জারি, হেপাটোবিলিয়ারি এন্ড প্যানক্রিয়েটিক সার্জারি, গাইনোকলোজিক্যাল অনকোলজি, রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড ইনফার্টিলিটি, ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন এবং ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ নামে আরো ৭টি বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনুমোদিত হয়েছে নতুন শিশু অনুষদ। মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় গবেষণাকে জোরদার করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ ঘণ্টা ল্যাবরেটরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি বিভাগে রোগীর ল্যাবরেটরি রিপোর্ট অনলাইনে মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা এবং একুশে গ্রেনেড হামলায় আহত রোগীদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় করোনা মহামারিতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম এবং বিশে^ পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। এই চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে এই বিশ^বিদ্যালয় সংযুক্ত হাসপাতাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলাদেশ ও কোরিয়া সরকারের যৌথ অর্থায়নে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। এর ফলে দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে না গিয়ে কম খরচে উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। লিভারসহ অন্যান্য অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রমও সমান্তরালভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র। বেসরকারি রেসিডেন্টদের জন্য সরকার থেকে মাসিক ২০ হাজার টাকা সম্মানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে সকল ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস। শিক্ষা, সেবাসহ সকল পর্যায়ের মান উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)। সকল শিক্ষক, কনসালট্যান্ট, কর্মকর্তা, নার্সদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল এখন নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে দেশের প্রথম সারির জার্নাল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। গত তিন বছরে ১ হাজার ৫শ’টি গবেষণা কর্মসম্পন্ন হয়েছে। প্রতি মাসে বিশ^বিদ্যালয়ের সকল সংবাদসহ নিউজ লেটার নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর প্রকাশনা, সকল জাতীয় আন্তজাতিক দিবস সমূহকে সঠিকভাবে উদযাপন করা হয়েছে। প্রতি মাসে সাইন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণে শিক্ষক, চিকিৎসকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। প্রতি বছর ‘বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে। গত তিন বছরে ২৪০ জন শিক্ষক এবং ৯১০ জন ছাত্রকে গবেষণা অনুদান দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্বারক চুক্তি।
আগামী ৫০ বছরের পরিকল্পনা বিবেচনায় রেখে একটি মাস্টারপ্লান নিয়ে চলছে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম। অচিরেই যুক্ত হতে চলেছে ইমার্জেন্সি সার্ভিস, ওয়ান পয়েন্ট চেকআপ সেন্টার, ডে কেয়ার সেন্টার, বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন, ই-টিকেটিং, সর্বক্ষেত্রে স্মার্ট পদ্ধতি। অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমরা এখানে কার্যক্রম পরিচালনা করি। তারপরও সকল শিক্ষক, ছাত্র, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম, সেবা কার্যক্রম, গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে সফলতা নিয়ে।
প্রতিদিন এখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ- দেশি-বিদেশি চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের উপস্থিতিতে। আমাদের ছাত্র এবং তরুণ চিকিৎসকরা এ সুযোগ গ্রহণ করে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে নতুন নতুন জ্ঞান/অভিজ্ঞতা নিয়ে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন সোসাইটির সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্র।
ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার তা করব। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের বুকে একটা রোল মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠা করব- এই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভিসি হিসেবে আমার অঙ্গীকার। উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান, শিক্ষা ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সংযুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা সবার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সহযোগিতায় এবং সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনায় সফল হবোই, ইনশাল্লাহ।
লেখক: উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বিষয়: #আধুনিক গতিশীল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে





আন্তর্জাতিক সালিশে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও আদানি গ্রুপ
এই নির্বাচন হয়তো আমার শেষ নির্বাচন: মির্জা ফখরুল
নেতাকর্মীদের অবৈধ সুবিধা দিলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট
জোটের ভোটে প্রতীক নিয়ে বিতর্কে বিএনপি-জামায়াত
রঙ মেশানো ডাল আমদানি ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা
যোগাযোগ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা না এলে তা অর্থনীতির জন্য গলার ফাঁস হবে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ইজতেমা
ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
কাল থেকে যাওয়া যাবে সেন্টমার্টিন 