বুধবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রচ্ছদ » ইসি ও নির্বাচন » চলছে দুই ভোটের প্রস্তুতি: ভোটগ্রহণ ৯ ঘণ্টা, শিগগিরই চূড়ান্ত তফসিল ঘোষণা
চলছে দুই ভোটের প্রস্তুতি: ভোটগ্রহণ ৯ ঘণ্টা, শিগগিরই চূড়ান্ত তফসিল ঘোষণা
শায়লা শবনম
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট এ দুটি জাতীয় আয়োজন এবার একই দিনে করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাংলাদেশের নির্বাচনি ইতিহাসে একসঙ্গে দুটি ভোট আয়োজনে এটি হবে ইসির প্রথম অভিজ্ঞতা। ফলে ভোট পরিচালনার কাঠামো, সময় ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও লজিস্টিক প্রস্তুতিতে তীব্র চাপের মুখে পড়েছে সংস্থাটি। ইসি সূত্র জানায়, আগামী ৭ ডিসেম্বর রবিবার কমিশন সভায় ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটের দিন চূড়ান্ত করে নির্বাচনি তফসিল
করা হবে। একই সঙ্গে আবহাওয়া অফিস থেকে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের আবহাওয়ার পূর্বাভাসও চাওয়া হয়েছে, যাতে সকালে দ্রুত ভোট শুরু করা যায় কিনা তা মূল্যায়ন করা যায়।
তফসিলের আগে মক ভোটিং, ব্যালট ছাপার কাজ, বাড়তি গোপন কক্ষ প্রস্তুত, নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়ন সব মিলিয়ে বহুস্তরীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যস্ত সময় পার করছে ইসি। মক ভোটিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে দুই ধরনের ভোট একসঙ্গে নিতে ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯ ঘণ্টা করার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত, জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
জনমনে কবে ভোট হবে এ প্রশ্নের অবসান ঘটাতে আগামী রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বিশেষ বৈঠকে বসছে সিইসি নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ওই সভাতেই সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল এবং ভোটের দিন-ক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার স্বদেশভূমিকে জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সম্ভাব্য তারিখ পর্যালোচনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে ভোটার প্রবাহ ও সময় বিশ্লেষণের ফলে সময় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়েছে। তার ভাষায়, “রবিবার থেকে যেকোনো দিন হঠাৎ করেই তফসিল ঘোষণা করা হবে।”
কমিশন সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারির ৮–১২ তারিখের মাঝামাঝি একটি দিনই ভোটের সম্ভাব্য সময়। তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন জমা, বাছাই, আপিল-নিষ্পত্তি, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দ সব মিলিয়ে প্রায় দুই মাস সময় ধরে নির্বাচন প্রক্রিয়া এগোবে। একই দিনে দুই ভোট হওয়ায় প্রতিটি কেন্দ্রে গোপন কক্ষ একটির বদলে দুটি করা হবে, আর প্রতিটি বুথে সিল দেওয়ার অতিরিক্ত ব্যবস্থা রাখা হবে।
গত শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে আয়োজিত মক ভোটিংয়ে দেখা যায়, ভোটারদের লাইনে দেড় ঘণ্টার অপেক্ষা তৈরি হয়। একই কক্ষে সংসদ ও গণভোটের ব্যালট দেওয়ার কারণে প্রতিভোটে সময় বেড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “মানুষের কষ্ট বাড়ানো নয়, সময় কমিয়ে সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। একই দিনে দুই ভোট আয়োজন সময় ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।”
এখন পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মোট ৮ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ চলে। কিন্তু দুই ধরনের ব্যালট একসঙ্গে দেওয়ার বাড়তি চাপে ইসি এবার ভোট গ্রহণের সময় ৮ ঘণ্টা থেকে আরও এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯ ঘণ্টা করার কথা ভাবছে ইসি। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, যেহেতু গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একদিনে হবে, তাই গোপন কক্ষের সংখ্যা বাড়ানো কথা ভাবা হচ্ছে। আবার ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯ ঘণ্টা করা হতে পারে। এজন্য সকাল-বিকালে দু’দিকেই সময় বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এখন সকাল ৮ থেকে ভোট শুরু হয়, সেটা সাড়ে ৭টা হতে পারে। আবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট হয়, সেটা সাড়ে ৪টা করার কথা ভাবা হচ্ছে।
মক ভোটিংয়ের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভোটারপ্রতি সময় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফলে লাইনের চাপ কমাতে বুথ বাড়ানো ও সময় বৃদ্ধি—উভয় দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন।
ইসির নির্বাচনি প্রস্তুতির বড় অংশই এখন শেষ পর্যায়ে—ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আইন-বিধি সংশোধন, দল ও পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, দুই দফা আইন-শৃঙ্খলা বৈঠক—সবই শেষ। এখন বাজেট চূড়ান্তকরণ চলছে।
এদিকে, ইসি ইতোমধ্যে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র এবং ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে নারী ভোটকক্ষ আছে এক লাখ ২৯ হাজারের বেশি।
ছাপার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে
১৩ কোটি ভোটারের জন্য ২৬ কোটি ব্যালট
৩৪ হাজার মনোনয়নপত্র
৫ লাখ ফরম
১০ হাজার প্রতীকের পোস্টার
২০ লাখ প্যাকেটের মধ্যে ১৭ লাখ প্রস্তুত
পোলিং এজেন্টদের জন্য ৩২ লাখ পরিচয়পত্র
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, সরকারি প্রেসে ব্যালট পেপার এবং আর্মি সিকিউরিটি প্রেসে প্রবাসী ভোটের ব্যালট ছাপা হচ্ছে। নিবন্ধিত ভোটারের বেশি ব্যালট ছাপা হবে না—এই নীতি এবার কঠোরভাবে মানা হচ্ছে।
এছাড়া, ভোট যত ঘনিয়ে আসছে, নিরাপত্তা নিয়ে তত বাড়ছে উদ্বেগ। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় ককটেল বিস্ফোরণ, হামলা ও ভাঙচুরে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নির্বাচন ভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের পর ডিএমপি কমিশনারকে নিরাপত্তা বাড়ানোর চিঠিও দিয়েছে ইসি।
সিইসি নাসির উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, “চ্যালেঞ্জ অনেক। সমন্বয় ও পেশাদারিত্ব থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।” কমিশনার সানাউল্লাহ মনে করেন, অপরাধ দমন, অস্ত্র উদ্ধার, বর্ডার সিল করা, সাইবার বুলিং প্রতিরোধ সবই এবার অত্যন্ত জরুরি।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “একই দিনে সংসদ ও গণভোট—এমন নজির দেশের ইতিহাসে নেই। সময়, নিরাপত্তা ও ব্যালট ব্যবস্থাপনায় কঠোর প্রস্তুতির মধ্যেও আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছি।”





স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা হবে: ইসি সানাউল্লাহ
দ্রুত নির্বাচন কমিশন সার্ভিস বাস্তবায়নের দাবিতে উপজেলা কর্মকর্তাদের ক্ষোভ
ভোটারদের আস্থাহীনতা কাটিয়ে কেন্দ্রে আনার পরামর্শ ইইউ’র
জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবি
৭ দেশে নিবন্ধন অ্যাপ সচল হবে কাল
নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনের তাগিদ ইসি কর্মকর্তাদের
রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের থেকে কোন সুবিধা না নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ইসির নির্দেশ
৮০ দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে ইসির সংলাপ কাল
এনআইডি সংশোধন ও মাইগ্রেশন সাময়িক বন্ধ থাকবে: ইসি 
